এক যুগ পর বাগদাদে আরব লীগের শীর্ষ বৈঠক: ফোকাসে গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা ও সিরিয়ার নবযাত্রা

শনিবার (১৭ মে) থেকে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে শুরু হয়েছে আরব লীগের ৩৪তম নিয়মিত শীর্ষ সম্মেলন। এবারের সম্মেলনের প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার ভবিষ্যৎ। দীর্ঘ এক যুগ পর, ২০১২ সালের পর এই প্রথম ইরাক এই গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করল। শুধু তাই নয়, ১৯৭৮ সালের পর এটি ইরাকে অনুষ্ঠিত মাত্র চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলন, যা আরব কূটনীতিতে বাগদাদের পুনরায় কেন্দ্রীয় ভূমিকায় ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ছবি - সংগৃহীত

২২টি আরব রাষ্ট্রের শীর্ষ নেতা ও প্রতিনিধিরা বাগদাদের কঠোর সুরক্ষিত গ্রিন জোনের রিপাবলিকান প্যালেসে এই বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। এই সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন সিরিয়ায় নতুন নেতৃত্ব এসেছে এবং দেশটি আরব বলয়ে পুরোপুরি প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করছে। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদের ক্ষমতাচ্যুতি এবং তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে আহমদ আল-শারার আগমনের পর এটিই প্রথম নিয়মিত শীর্ষ সম্মেলন। এছাড়া, রিয়াদ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক দামেস্কের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পরিকল্পনার ঘোষণার কয়েকদিন পরই এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

সম্মেলনের প্রধান ফোকাসে গাজা, বাড়ছে গণহত্যার উদ্বেগ

এই শীর্ষ সম্মেলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় গাজা উপত্যকা। সেখানে প্রায় ২০ মাস ধরে চলা ইসরায়েলি অবরোধ এবং লাগাতার বোমাবর্ষণে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। ইসরায়েল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এই উপত্যকায় নির্মম সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছে। এতে নারী ও শিশুসহ ৫৩,০০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এছাড়াও, গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) গণহত্যার মামলার সম্মুখীন।

অন্যান্য আঞ্চলিক সংকট

গাজা ইস্যুর পাশাপাশি সম্মেলনে ইয়েমেন, সুদান, লিবিয়া এবং সোমালিয়ার মতো দেশগুলোর অমীমাংসিত প্রধান সংঘাতসমূহ এবং লেবাননের ভঙ্গুর স্থিতিশীলতা নিয়েও আলোচনা হবে। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান পারমাণবিক আলোচনাও পর্যালোচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আলোচ্যসূচির মূল বিষয় ও প্রত্যাশিত ফলাফল

এই শীর্ষ সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে আরব দেশগুলোর জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত আটটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। এর মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি, সন্ত্রাস দমন, ইথিওপিয়ার বাঁধ নিয়ে বিতর্ক, অধিকৃত সিরীয় গোলান মালভূমি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের দ্বীপগুলোতে ইরানের হস্তক্ষেপের মতো বিষয়গুলো অন্যতম।

অংশগ্রহণকারীরা জেরুজালেমের সর্বশেষ পরিস্থিতি, ফিলিস্তিনি বন্দী ও শরণার্থীদের দুর্দশা, ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর তহবিল এবং ফিলিস্তিনের পুনর্গঠন নিয়েও পর্যালোচনা করবেন।

জলবায়ু পরিবর্তন, যা একাধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় মানবজাতির জন্য অন্যতম প্রধান হুমকি হিসেবে বিবেচিত, সেটিও আলোচনার টেবিলে স্থান পাবে।

সম্মেলনের শেষে 'বাগদাদ ঘোষণা' গৃহীত হবে, যেখানে এই অঞ্চলের জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে আরব দেশগুলোর একটি সমন্বিত ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান প্রতিফলিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পরবর্তী শীর্ষ সম্মেলনের স্থান নির্ধারণ এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় মনোনয়নের বিষয়ও এই সম্মেলনেই চূড়ান্ত হবে।