অবরোধ ভাঙুন, যুদ্ধ থামান: আরব বিশ্বের প্রতি গাজার আকুতি

গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙতে এবং ১৯ মাসের বেশি সময় ধরে চলা নৃশংসতা ও হত্যাকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বাগদাদে আরব লীগ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী আরব নেতাদের প্রতি জরুরি আহ্বান জানিয়েছে গাজা সরকার।

ছবি - সংগৃহীত

এক বিবৃতিতে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস রাষ্ট্রপ্রধানদের উদ্দেশে বলেছে, ‘তাদের নৈতিক দায়িত্ব গ্রহণ করতে এবং গাজার ওপর চাপানো অন্যায্য অবরোধ তুলে নিতে ও ইসরায়েলের চালানো দৈনন্দিন হত্যাকাণ্ড ও ব্যাপক নৃশংসতা বন্ধ করতে সাহসী পদক্ষেপ নিন।’

আহ্বানে আরও বলা হয়েছে, ‘সকল সীমান্ত ক্রসিং নিঃশর্তভাবে খুলে দেওয়া হোক এবং গাজায় খাদ্য, চিকিৎসা ও মানবিক সহায়তার নিশ্চিত সরবরাহ নিশ্চিত করা হোক।’

মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, সেখানে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ আটকা পড়ে আছে, যা একটি পরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ নীতির শামিল। বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, ‘এটি কোনো লজিস্টিক ব্যর্থতা নয়, এটি দুর্ভিক্ষ ও বঞ্চনার একটি পরিকল্পিত কৌশল।’

উল্লেখ্য, ‘সংলাপ, সংহতি ও উন্নয়ন’ প্রতিপাদ্যে ৩৪তম আরব লীগ শীর্ষ সম্মেলন শনিবার বাগদাদের গ্রিন জোনের রিপাবলিকান প্যালেসে শুরু হয়েছে, যেখানে ফিলিস্তিনি ইস্যুটি আলোচ্যসূচির কেন্দ্রে রয়েছে।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে

এদিকে, গাজার আল-আওদা হেলথ অ্যান্ড কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন শনিবার পৃথকভাবে সতর্ক করেছে যে, চলমান ইসরায়েলি অবরোধের কারণে আগামী দিনগুলোতে তারা তাদের সমস্ত চিকিৎসা ও সামাজিক পরিষেবা বন্ধ করতে বাধ্য হতে পারে। গত ২ মার্চ থেকে চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ বন্ধ থাকায় এই সংকট তৈরি হয়েছে।

অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক রাফাত আল-মাজদালাভি জানিয়েছেন, জ্বালানির চরম সংকটের কারণে সমিতির নয়টি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে সাতটি ইতোমধ্যেই পরিষেবার বাইরে চলে গেছে। তিনি বলেন, ‘৭০ দিনের বেশি সময় ধরে আমাদের কাছে কোনো চিকিৎসা সামগ্রী না পৌঁছানোর কারণে আমাদের সমিতির দেওয়া পরিষেবাগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়ার মুখে।’

অবরোধের কারণে বিদ্যমান পরিষেবাগুলো ইতোমধ্যেই ন্যূনতম সক্ষমতায় চলছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সংস্থাটি আন্তর্জাতিক ও আরব সংস্থাগুলোকে জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী ও জ্বালানি সরবরাহের আহ্বান জানিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে স্বাস্থ্য সুবিধাগুলোর আইনি সুরক্ষার ওপর জোর দিয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েল সাম্প্রতিক দিনগুলোতে হাসপাতালের ওপর হামলা বাড়িয়েছে। দক্ষিণ গাজার ইউরোপীয় হাসপাতালে হামলার পর সেটি পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত ৫৩,০০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

প্রসঙ্গত, গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এছাড়া, ইসরায়েল এই ছিটমহলের বিরুদ্ধে তার সামরিক অভিযানের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।