গভর্নর: ‘দুর্ঘটনার’ শিকার অর্থনৈতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে

বাংলাদেশের অর্থনীতি এক প্রকার ‘দুর্ঘটনার’ শিকার হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অর্থনীতি পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে এবং এর ফলে অর্থনীতিতে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তনও এসেছে। তবে এই ধারা অব্যাহত রাখতে রাজনৈতিক সরকারের সদিচ্ছা ও ধারাবাহিক পদক্ষেপ অপরিহার্য।

ড. আহসান এইচ মনসুর

বুধবার (২১ মে) পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে গভর্নর এসব কথা বলেন।

ড. মনসুর বলেন, ‘অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে একটি বিপ্লব প্রয়োজন। এই বিপ্লবকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে, তবেই অর্থনৈতিক বিপ্লব সফল হবে।’

তিনি ভবিষ্যতের জন্য সতর্কতা অবলম্বনের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘ভবিষ্যতে যেন এমন পরিস্থিতি আর তৈরি না হয়, সেজন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও এ বিষয়ে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, অর্থনীতির এই ‘দুর্ঘটনা’ কবলিত অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে এবং অর্থনৈতিক বিপ্লব সফল করতে হলে ‘জুলাই বিপ্লব’কে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। এর পাশাপাশি অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি। তার মতে, আর্থিক কর্মকাণ্ড আনুষ্ঠানিক খাতের আওতায় এলে এবং ক্যাশলেস লেনদেন বাড়লে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে, যা অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হবে।

রিজার্ভ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটিকে পুনরায় ৪০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চায়। অর্থনীতিকে গতিশীল করার মাধ্যমে এটি সম্ভব। আশা করা যাচ্ছে, আগামী মাসেই রিজার্ভ ২৭ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। তবে ৪০ বিলিয়ন ডলারের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে আরও সময়ের প্রয়োজন।’

আর্থিক বৈষম্য নিরসনের ওপর গুরুত্বারোপ করে গভর্নর বলেন, ‘দেশের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষ ঋণের সিংহভাগ সুবিধা পাচ্ছে। এই বৈষম্য দূরীকরণে এজেন্ট ব্যাংকিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) এবং এজেন্ট ব্যাংকগুলো যদি স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ শুরু করে, তাহলে ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে এবং তারাও সুদের হার কমাতে বাধ্য হবে।’ এর মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির প্রসার ঘটবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।