ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ নয়, ইরানের সাফ জবাব; আলোচনার মাঝেই ইসরায়েলের হামলার প্রস্তুতি?

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধের কোনো মার্কিন দাবি মেনে নেওয়া হবে না। এমন পরিস্থিতিতে কোনো পারমাণবিক চুক্তি সম্ভব নয় বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২২ মে) আল-আরাবিয়ার এক প্রতিবেদনে তার এই মন্তব্য প্রকাশিত হয়।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি

আরাঘচি বলেন, ‘ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইরানের একটি অবিচ্ছেদ্য অধিকার। এই প্রক্রিয়া বন্ধ করার যে কোনো প্রচেষ্টা পারমাণবিক চুক্তির পথে বিশাল বাধা সৃষ্টি করবে।’ তার এই কঠোর বার্তার মধ্যেই আজ শুক্রবার ইতালি থেকে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পঞ্চম দফার আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরেই ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক আলোচনার প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইস্যু। ওয়াশিংটন চায়, তেহরান যেন স্থায়ীভাবে তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। অন্যদিকে, ইরান শুরু থেকেই এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছে এবং একে নিজেদের সার্বভৌম অধিকার বলে মনে করে।

এর আগে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছেন। হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলাইন লেভিট জানিয়েছিলেন, ট্রাম্প মনে করেন এই চুক্তির পরিণতি দুটি হতে পারে – হয় এটি একটি ইতিবাচক কূটনৈতিক সমাধানে পৌঁছাবে, অথবা ইরানের জন্য অত্যন্ত নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করবে।

ইসরায়েলের সপ্তাহব্যাপী হামলার প্রস্তুতি

এদিকে, চলমান উত্তেজনার মধ্যেই মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস ও সিএনএন সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোতে সম্ভাব্য হামলার জন্য ইসরায়েল পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই হামলা একদিনের জন্য নয়, বরং অন্তত এক সপ্তাহ ধরে চলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করছেন যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চলমান পারমাণবিক আলোচনা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হবে। তারা মূলত এই আলোচনার ব্যর্থতার জন্যই অপেক্ষা করছেন এবং এরপরই ইরানে সামরিক অভিযান শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এই বিষয়ে তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত বলেও জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের এই প্রস্তুতির বিষয়ে অবগত থাকলেও, তারা আশঙ্কা করছে যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সম্মতি ছাড়াই নেতানিয়াহু ইরানে হামলা চালিয়ে দিতে পারেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের একতরফা কোনো অভিযান মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে এবং পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়ার মারাত্মক ঝুঁকিও তৈরি করতে পারে।