আপনি পড়ছেন

সম্প্রতি ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ভারতের সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ‘ব্রহ্মস’ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিধ্বংসী ভূমিকা পালন করেছে বলে ভারতীয় সূত্রগুলো দাবি করছে। তাদের মতে, এই ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে পাকিস্তানের অন্তত নয়টি বিমানঘাঁটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক অস্ত্রবাজারে ব্রহ্মসের চাহিদা আকস্মিকভাবে বেড়ে গেলেও, এই শক্তিশালী অস্ত্র রপ্তানি করে ভারতের অর্থনৈতিক লাভের সুযোগ বেশ সীমিত। এক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের দীর্ঘদিনের ‘বন্ধু’ রাশিয়া।

indias brahmos supersonic cruise missileভারতের ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র

ভারতীয় অস্ত্র বিশ্লেষকদের মতে, যদি ‘ব্রহ্মস’ ক্ষেপণাস্ত্র আন্তর্জাতিক বাজারে অবাধে বিক্রি করার সুযোগ থাকত, তবে তা ভারতের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারত। কিন্তু এই মারণাস্ত্রের প্রযুক্তির একক দাবিদার ভারত নয়; এতে রাশিয়ারও ৫০ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে। ভারতের ব্রহ্মপুত্র নদ ও রাশিয়ার মস্কোভা নদীর নাম অনুসারে এই ক্ষেপণাস্ত্রের নামকরণ করা হয়েছে ‘ব্রহ্মস’। এটি উৎপাদনকারী সংস্থা ‘ব্রহ্মস অ্যারোস্পেস লিমিটেড’ হলো ভারতের ‘ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’ (ডিআরডিও) এবং রুশ প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ‘এনপিও মাশিনোস্ট্রোয়েনিয়ার’ একটি যৌথ উদ্যোগ।

এই যৌথ মালিকানার কারণেই কোনো দেশকে ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করার আগে রাশিয়ার আনুষ্ঠানিক সম্মতি গ্রহণ করা ভারতের জন্য বাধ্যতামূলক। আর এখানেই তৈরি হয়েছে এক বড় ধরনের কূটনৈতিক সংকট। কারণ, আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মস্কো ও নয়াদিল্লির স্বার্থ বহু ক্ষেত্রেই ভিন্ন। ফলে, কোনো দেশকে ব্রহ্মস দেওয়ার প্রস্তাবে ক্রেমলিন বা রুশ সরকার যে বারবার ‘ভেটো’ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে, সেই আশঙ্কা প্রবল।

বিশ্বের বর্তমান অস্ত্রের বাজার মূলত রাশিয়া, আমেরিকা, চীন এবং ফ্রান্সের মতো দেশগুলোর নিয়ন্ত্রণে। এই দেশগুলো তাদের নিজেদের তৈরি অস্ত্র স্বাধীনভাবে বিক্রি করতে পারে। কিন্তু ভারতের হাতে থাকা সত্ত্বেও ‘ব্রহ্মস’ বিক্রির ক্ষেত্রে রাশিয়ার সম্মতি না থাকলে নয়াদিল্লির কার্যত কিছুই করার থাকে না। এক্ষেত্রে রাশিয়ার নিজস্ব ভূ-রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ এবং চীনের সঙ্গে তাদের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোনেশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যেই এই অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রটি কেনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে, এসব ক্ষেত্রে চীনের সম্ভাব্য বিরোধিতার কারণে রাশিয়া সবসময় ইতিবাচক সাড়া দেবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এছাড়াও, আরব বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গেও কিছু কূটনৈতিক জটিলতা বিদ্যমান। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের মতো প্রভাবশালী দেশগুলো ‘ব্রহ্মস’ কিনতে আগ্রহী। কিন্তু এই দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান সংঘাত এবং আমেরিকার প্রভাব রাশিয়ার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে। উল্লেখ্য, ইসরায়েল ভারতের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ায়, তার প্রতিপক্ষ দেশের হাতে এমন মারণাস্ত্র তুলে দেওয়া ভারতের জন্যও কৌশলগতভাবে সমস্যাজনক হতে পারে।

‘ব্রহ্মস’ বিক্রির ক্ষেত্রে আরেকটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো ‘মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রিজিম’ (এমটিসিআর)। এই আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী, ভারত শুধুমাত্র ২৯০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রই রপ্তানি করতে পারবে। এর চেয়ে বেশি পাল্লার সংস্করণ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেক সম্ভাব্য ক্রেতা দেশ আগ্রহ হারাতে পারে।

তবে ভারত ‘ব্রহ্মস’-এর আরও উন্নত সংস্করণ তৈরির পরিকল্পনা করছে। ‘ব্রহ্মস মার্ক-২’ নামে একটি হাইপারসনিক সংস্করণ বর্তমানে উন্নয়নের পর্যায়ে রয়েছে, যার গতি হবে শব্দের চেয়ে আট গুণ বেশি। কিন্তু এই প্রযুক্তি এতটাই সংবেদনশীল যে, রাশিয়া সম্ভবত এর রপ্তানির ক্ষেত্রে আরও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করবে।

বর্তমানে ব্রহ্মসের চারটি সংস্করণ রয়েছে, যা ভূমি, যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান এবং সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য। এটি পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম এবং এর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় প্রায় ৪,৯০০ কিলোমিটার। ২০০৫ সাল থেকে ভারতীয় সামরিক বাহিনীতে ব্যবহৃত এই ক্ষেপণাস্ত্র সম্প্রতি ফিলিপাইনে সফলভাবে রপ্তানি করা হয়েছে, যেখানে রাশিয়া কোনো আপত্তি জানায়নি। তবে অন্যান্য দেশের সঙ্গে চুক্তির ক্ষেত্রে রাশিয়ার মনোভাবের ওপরই নির্ভর করছে ভারতের বিশ্ব অস্ত্রবাজারে প্রবেশের ভবিষ্যৎ।

এই পরিস্থিতি কেবল ব্রহ্মসের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি আত্মঘাতী ড্রোন ‘স্কাইস্ট্রাইকার’-এর ক্ষেত্রেও একই ধরনের বাধা আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে, অস্ত্র রপ্তানির বাজারে ভারতের বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও, তা বাস্তবে রূপ দিতে এখনও বহু কূটনৈতিক প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হবে।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.