রিজওয়ানা হাসান: সরকার ক্ষমতায় নয়, দায়িত্বে নিয়োজিত

পরিবেশ ও বন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্ধারিত সময়সীমার বাইরে যাওয়ার কোনো অবকাশ নেই বলেও তিনি জোর দেন। শুক্রবার (২৩ মে) দুপুরে রাজধানীতে একটি প্রোগ্রাম শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজওয়ানা হাসান

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। আমি প্রথম থেকেই বলে এসেছি যে উনি (প্রধান উপদেষ্টা) একটা সময় দিয়েছেন—ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তার একদিনও এদিক-সেদিক হওয়ার কোনো সুযোগ আমাদের পক্ষ থেকে নেই। কাজেই এগুলো নিয়ে অন্য ধরনের কোনো কথা বলারও কোনো সুযোগ হওয়া উচিত নয়।’

তিনি আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘ক্ষমতায়’ নেই, বরং জনগণের অর্পিত ‘দায়িত্বে’ নিয়োজিত রয়েছে। এই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে জনগণের সহযোগিতাই প্রধান শক্তি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক পদত্যাগ প্রসঙ্গে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এখন কিছু কিছু গুরু দায়িত্ব আছে, সেগুলো পালনের সঙ্গেও তো মাসের একটা সম্পর্ক থাকতে পারে। যদি কোনো কিছু বলার থাকে, আমি নির্বাচনের প্রশ্নেও বলেছি, দায়িত্ব পালনের প্রশ্নেও বলেছি—ওটা আপনারা ওনার (প্রধান উপদেষ্টার) কাছ থেকেই শুনবেন।’

সরকারের ওপর কোনো ধরনের চাপ আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ধরুন, প্রত্যাশার একটা চাপ হচ্ছে যে আমরা পারফর্ম করতে পারছি কি না। আমাদের বিবেচনায় ওটাই একমাত্র চাপ। এর বাইরে আর কোনো চাপ নেই।’

দৈনন্দিন নাগরিক সমস্যা, যেমন যানজটের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, ‘আপনি এখন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মিটিংয়ে যাবেন—সচিবালয় থেকে যমুনা—যেতে পারবেন না, রাস্তা বন্ধ। কেন রাস্তা বন্ধ? এরকম অনেক সমস্যা আছে, যেগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা যায়। চাপ হচ্ছে আমাদের নিজেদের পারফরম্যান্সের।’

বর্তমান সরকার তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছে কিনা, এ প্রশ্নের উত্তরে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে অনেক দূর এগিয়েছি। সংস্কার কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে, সেই প্রতিবেদনের ওপর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল সেখানে অংশগ্রহণ করছে। এটা কি পারা না? এটাতো পারা।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা একটা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বলে দিয়েছি যে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে সেটাও একটা পারা। বিচার ট্রাইব্যুনাল একটা ছিল এখন দুইটা হয়েছে, আগামীকাল থেকে ট্রায়ালের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এই কাজগুলো আমরা সঠিক প্রক্রিয়াতে শেষ করতে চাই।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গতকালকে আমাদের মিটিংয়ের পর অনেকক্ষণ আলোচনা করেছি। মোটা দাগে আমাদের দায়িত্ব তিনটা। তিনটাই কঠিন কঠিন দায়িত্ব। একটা দায়িত্ব হচ্ছে সংস্কার, আরেকটা দায়িত্ব হচ্ছে বিচার, আরেকটা দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন। শুধুমাত্র নির্বাচন করার জন্য আমরা দায়িত্ব নিইনি।’

বিভিন্ন দাবি নিয়ে রাস্তা অবরোধ ও ঢাকা শহর অচল করে দেওয়ার মতো সাম্প্রতিক ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যার যত দাবি আছে সবগুলো নিয়ে রাস্তায় বসে যাচ্ছে। রাস্তা আটকে দিচ্ছে, একদম ঢাকা শহর অচল করে দিচ্ছে। সে অচলাবস্থা নিরসনে আমরা কিছু করতে পারছি কি না? আমরা আগেও বলেছি আমরা ক্ষমতায় নই, দায়িত্বে আছি। এই দায়িত্ব পালন করা তখনই আমাদের জন্য সম্ভব হবে, যখন আমরা সবার সহযোগিতা পাব।’

সবশেষে তিনি নিজের ও সরকারের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারি, তাহলে আমাদের দায়িত্ব থাকাটা প্রাসঙ্গিক। আমরা যদি না পারি, আমাদের যার যার নিজস্ব কাজ আছে, সেখানে ফিরে যাবো। দায়িত্ব পালন করতে না পারলে দায়িত্বে থাকাটা আর প্রাসঙ্গিক থাকলো কি না?’