হিজাবকে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী প্রতীক’ ঘোষণা, সুরক্ষা আইন দাবি
- Details
- by ২৪ ডেস্ক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হিজাবকে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী প্রতীক’ হিসেবে ঘোষণা করেছে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ। সংগঠনটি ‘দীর্ঘ ১৬ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনকালে’ হিজাব পরিহিত শিক্ষার্থীদের ওপর হওয়া নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং জুলাই বিপ্লবসহ সকল ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামে হিজাব পরিহিতাদের ভূমিকাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছে। একইসঙ্গে, হিজাব সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করে হিজাব পরিধানকারী শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন ও বৈষম্যকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণারও দাবি তুলেছে সংগঠনটি।
ছবি - সংগৃহীত
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় ‘Celebrating Women’s Dignity and Pride 2025’ (নারীর মর্যাদা ও গৌরব উদযাপন ২০২৫) শীর্ষক এক উৎসবে এসব দাবি জানানো হয়। বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজারেরও বেশি নিবন্ধিত নারী শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম ধাপে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর হাতে ‘প্রতিরোধ ও সম্ভ্রমের প্রতীক’ হিসেবে হিজাব তুলে দেওয়া হয়। অন্যান্য নারী শিক্ষার্থীদের চকলেট ও কলম উপহার দেওয়া হয়। সংগঠনটি জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপে নিবন্ধিত বাকি শিক্ষার্থীদেরও হিজাব প্রদান করা হবে।
সকাল ১০টায় বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক সানোয়ারা খাতুনের সভাপতিত্বে উৎসব শুরু হয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি মরিয়ম জামিলা তামান্না, যিনি হিজাব পরার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হল থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন বলে দাবি করেন এবং ইসলামী ছাত্রী সংস্থার সাবেক কেন্দ্রীয় নেত্রী ছিলেন।
মরিয়ম জামিলা তামান্না বলেন, ‘গত ষোল বছরের ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে একটি মুসলিম দেশে বাস করেও আমরা ধর্মীয় স্বাধীনতা ও পোশাকের স্বাধীনতা পাইনি। হিজাব পরার কারণে আমাকেসহ অনেক বোনকে আবাসিক হলে থাকতে দেওয়া হয়নি, মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। দুঃখজনকভাবে, এসব ঘটনায় হিজাব বিদ্বেষী শিক্ষকরাও জড়িত ছিলেন।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনা শাসনের প্রথমভাগে তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ না থাকলেও পরবর্তীতে হিজাব বৈষম্যের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে এবং এই প্রতিরোধের ধারাবাহিকতায় বিপুল সংখ্যক হিজাব পরিহিত শিক্ষার্থী জুলাই বিপ্লবে সম্মুখ সারিতে ছিলেন।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিনা তামান্না নেকাব পরার কারণে ব্যক্তিগত বৈষম্যের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাসেই শিক্ষক তাকে অপমান করেন এবং পরীক্ষার হল ও ভাইভা বোর্ডে নিকাব খুলতে বাধ্য করা হতো। ফ্যাসিবাদের পতনের পর এর প্রতিবাদ করে তিনি বৈষম্যের অবসান ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী নাফিসা ইসলাম সাকাফি ছাত্রীদের নিজেদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। সানোয়ারা খাতুন তার বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে জেঁকে বসা ইসলামোফোবিয়া বা মুসলিম নারীদের নিষ্পেষণের সংকট থেকে উত্তরণের মাধ্যম ছিলো জুলাই আগস্টের বিপ্লব, যেখানে নারীদের উপস্থিতি ছিল স্বতঃস্ফূর্ত ও ঐতিহাসিক।’
‘প্রোটেস্ট অ্যাগেইনস্ট হিজাবফোবিয়া ইন ডিইউ’ এর সদস্য হাবিবা মাহজাবিন জ্যোতি বলেন, পর্দাকে জঙ্গিবাদের প্রতীক হিসেবে চিত্রায়িত করে হিজাবের বিরুদ্ধে ভীতি তৈরি করা হয়েছে, যা সমাধানে তারা কাজ করছেন।
অনুষ্ঠানে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে নারীর প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়। এতে ভর্তি, একাডেমিক ও নিয়োগ পরীক্ষা এবং ভাইভাতে নিকাব পরিহিত ছাত্রীদের পরিচয় শনাক্তকরণে ফিংগারপ্রিন্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। আরও বলা হয়, ইসলাম নারীকে যে উচ্চ মর্যাদা দিয়েছে, তার আলোকে পুরুষের চেয়ে নারীর বেশি অধিকার প্রাপ্য। এ জন্য নারীদের উচ্চশিক্ষায় বিশেষ বৃত্তি, বিনা সুদে শিক্ষাঋণ, বিনামূল্যে চিকিৎসা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিশেষ নিরাপত্তা, নারীবান্ধব গণপরিবহন এবং সম্পত্তিতে ইসলাম প্রদত্ত অধিকার বাস্তবায়নের পাশাপাশি বাবা-ভাই-স্বামীর কাছ থেকে সম্পত্তি উপহারের সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
দিনব্যাপী আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা হিজাব বিদ্বেষের বিরুদ্ধে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন। ব্যানারে লেখা ছিল, ‘হিজাব হোক প্রতিরোধের প্রতীক’, ‘একমাত্র হিজাবই নারীর সর্বোচ্চ সম্মানের প্রতীক’, ‘আমার সোনার বাংলায় হিজাব বৈষম্যের ঠাই নয়’।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জি এ গাউস, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমীর শায়খুল হাদিস আহমদ আলী কাসেমী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. বেলাল হোসাইন, ইসলামী লেখক ও গবেষক মূসা আল-হাফিজ, ওয়ার্ল্ড মুসলিম উম্মাহর সভাপতি ডা. ফরিদ উদ্দীন আহমদ খান, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, নবাব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন পরিচালক নবাব তাহের আলী চৌধুরী, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সদস্য সচিব হাসান মোহাম্মদ আরিফ, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ, সদস্য সচিব ফজলুর রহমান প্রমুখ।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.