জাতিসংঘ: গাজার কৃষিভূমি ধ্বংসের মুখে, তীব্র খাদ্যসংকট ও দুর্ভিক্ষের অশনিসংকেত

গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান ও প্রবেশাধিকার কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ করার ফলে পাঁচ শতাংশেরও কম কৃষিজমি বর্তমানে চাষের উপযোগী রয়েছে। জাতিসংঘের এক নতুন প্রতিবেদনে এই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, এই পরিস্থিতি গাজায় মারাত্মক দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি তৈরি করছে। এ খবর জানিয়েছে রয়টার্স ও মিডলইস্টমনিটর।

ইসরায়েলি হামলায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজার কৃষিজমিগুলো

জাতিসংঘ স্যাটেলাইট সেন্টারের সহায়তায় তৈরি এই মূল্যায়ন প্রতিবেদন সম্পর্কে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল বেথ বেকডল বলেন, ‘এই ধ্বংসযজ্ঞ শুধু অবকাঠামোর ক্ষতি নয়, এটি গাজার কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থার পতন এবং জীবনরেখাগুলোরও ধস।’

ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার আগে গাজার ফিলিস্তিনি কৃষকরা কমলা, খেজুর ও জয়তুনসহ নানা ধরনের ফসল চাষ করতেন। জাতিসংঘের সর্বশেষ মূল্যায়নে বলা হয়েছে, বর্তমানে গাজার সর্বমোট ৬৮৮ হেক্টর (মোট ভূমির চার দশমিক ছয় শতাংশ) জমি চাষের উপযোগী রয়েছে। যুদ্ধে গাজার ৮০ শতাংশের বেশি কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৭৭ দশমিক আট শতাংশ জমিতে কৃষকদের প্রবেশাধিকার নেই বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞা, নিষিদ্ধ এলাকা চিহ্নিতকরণ ও জনগণকে সরিয়ে নেওয়ার আদেশের কারণে গাজাবাসী সেখানে তাদের প্রবেশাধিকার হারিয়েছে।

উচ্চ রেজুলেশনের স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘গাজার প্রায় ৭৫ শতাংশ গ্রিনহাউস অবকাঠামো এবং ৮০ শতাংশের বেশি কূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে রাফাহ অঞ্চল ও উত্তর গাজা- যেখানে প্রায় সব কৃষিজমিই অপ্রবেশযোগ্য, সেখানে পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত গুরুতর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।’

এফএও সতর্ক করে বলেছে, ‘কৃষি উৎপাদন ক্ষমতা পুনরুদ্ধার না হলে গাজাবাসীর খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।’ সহায়তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক অভিযানে গাজার শেষ অবশিষ্ট খাদ্য উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থাও ধ্বংস হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়কারী মার্ক লোকক বলেছেন, ‘গাজার কৃষি খাতের এই ধ্বংসস্তূপ মানে শুধু আজকের খাদ্য সংকট নয়, ভবিষ্যতের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াও এখন পুরোপুরি অন্ধকারে।’

গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের কারণে খাদ্য আমদানি মারাত্মকভাবে কমে গেছে। ফলে অর্ধমিলিয়নের বেশি মানুষ এখন চরম খাদ্য সংকটে ভুগছে। এই সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে ইসরায়েলের নিষেধাজ্ঞা ও চলমান যুদ্ধের কারণে সহায়তা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে সাহায্য সংস্থাগুলো।