কানাডা সীমান্তে ৪ ভারতীয়র মৃত্যু: যুক্তরাষ্ট্রে দুই মানব পাচারকারী কারাদণ্ডে দণ্ডিত

২০২২ সালে কানাডা-মার্কিন সীমান্ত অতিক্রমের সময় তীব্র ঠান্ডায় জমে এক শিশুসহ চার ভারতীয় নাগরিকের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে দুই মানব পাচারকারীকে কারাদণ্ড দিয়েছে মার্কিন আদালত। বুধবার মার্কিন বিচার বিভাগ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ছবি - সংগৃহীত

মার্কিন বিচার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পাচারের মূল হোতা এবং রসদ যোগানদাতা হিসেবে অভিযুক্ত ২৯ বছর বয়সী হর্ষকুমার রমনলাল প্যাটেলকে ১০ বছরের বেশি কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে তার সহযোগী ৫০ বছর বয়সী স্টিভ অ্যান্থনি শ্যান্ডকে ছয় বছরের বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।

বিচার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একটি জুরি এই দুজনকে একটি ‘বৃহৎ পরিসরের মানব পাচার কার্যক্রমে’ তাদের ভূমিকার জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছে। এই সংঘবদ্ধ চক্রটি মূলত জাল ছাত্র ভিসার মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকদের প্রথমে কানাডায় নিয়ে আসত এবং পরে সুযোগ বুঝে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করত।

মার্কিন বিচার বিভাগ (ডিওজে) জানিয়েছে, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ভয়াবহ বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে প্যাটেল এবং শ্যান্ড ১১ জন ভারতীয় নাগরিককে কানাডা থেকে পায়ে হেঁটে যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের চেষ্টা করে। ডিওজে আরও উল্লেখ করেছে, সে সময় নথিভুক্ত উইন্ড চিল তাপমাত্রা ছিল -৩৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস (-৩৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট), যা জীবনের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ।

ঘটনার দিন, একজন মার্কিন সীমান্ত টহল এজেন্ট মিনেসোটার তুষারপাতের মধ্যে শ্যান্ডের ভ্যানটিকে আটকে পড়া অবস্থায় দেখতে পান। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে শ্যান্ড প্রাথমিকভাবে দাবি করে যে ঠান্ডায় আর কেউ আটকা পড়েনি। কিন্তু পরবর্তীতে মাঠ থেকে আরও পাঁচজন ভারতীয় নাগরিক বেরিয়ে আসে, যাদের মধ্যে একজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আকাশপথে হাসপাতালে নিয়ে জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। এরপর শ্যান্ডকে দুইজন অভিবাসীসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

তবে, মর্মান্তিকভাবে নিখোঁজ চার সদস্যের ওই ভারতীয় পরিবারের সন্ধান তখন মেলেনি। পরবর্তীতে, রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি) কানাডার একটি প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলে তাদের জমে যাওয়া নিথর দেহ খুঁজে পায়। নিহতদের মধ্যে একটি তিন বছর ও একটি ১১ বছর বয়সী শিশুও ছিল।

ডিওজে এক বিবৃতিতে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের বর্ণনা দিয়ে বলেছে, ‘ছেলে শিশুটিকে একটি কম্বলে মোড়ানো ছিল এবং তার বাবার জমে যাওয়া হাতমোজা দিয়ে তার মুখ ঢাকা ছিল।’

এই মামলার প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত মার্কিন অ্যাটর্নি লিসা ডি. কার্কপ্যাট্রিক গভীর দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘যখনই আমি এই মামলার কথা ভাবি, আমার সেই পরিবারটির কথা মনে পড়ে – যাদের মধ্যে দুটি ফুটফুটে শিশুও ছিল – যাদেরকে আসামিরা নির্মমভাবে তুষারঝড়ের মধ্যে ঠান্ডায় জমে মারা যাওয়ার জন্য ফেলে রেখেছিল।’