নগদের সংকট নিরসন: ডাক বিভাগের নিয়ন্ত্রণে নতুন ব্যবস্থাপনা

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নগদ লিমিটেডে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। আজ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

নগদের লোগো

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নগদ লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মধ্যে গত ২৭ মে একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় নগদের সাম্প্রতিক ব্যবস্থাপনাগত অস্থিতিশীলতা এবং বাজারের প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। বাংলাদেশের প্রায় নয় কোটি মানুষ দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেনের জন্য নগদের ওপর নির্ভরশীল। তাই, এর ব্যবস্থাপনায় সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা দ্রুত সমাধানে উপস্থিত সবাই একমত হন এবং নিজ নিজ দায়িত্ব ভাগ করে নেন।

এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে, নগদের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শ্যামল বি দাস ডাক বিভাগের মহাপরিচালকের কাছে একটি আবেদন করেন। এই আবেদনে তিনি নগদের মালিকানা, পরিচালনা পদ্ধতি, অভ্যন্তরীণ শেয়ার এবং সকল অপারেশনাল কার্যক্রমের দায়-দায়িত্ব ডাক অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তাব দেন।

শ্যামল দাসের আবেদন গ্রহণ করে ডাক অধিদপ্তর তাদের পরিচালক আবু তালেবকে নগদের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব প্রদান করে। নগদের ডেপুটি সিইও মো. মুয়িয তাৎক্ষণিকভাবে নতুন সিইও আবু তালেবকে স্বাগত জানান এবং সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

সরকার সম্প্রতি জুয়া, জালিয়াতি, অনলাইন প্রতারণা এবং টাকা পাচার রোধে দেশের মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে। নগদের নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সরকারের এই নির্দেশাবলী পালনে পূর্ণ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। তারা সাইবার জুয়ায় ব্যবহৃত এমএফএস অ্যাকাউন্ট বন্ধ, সঠিক তথ্যবিহীন কেওয়াইসি অ্যাকাউন্ট বাতিল, এক জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে একাধিক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা এবং ভুয়া ডিস্ট্রিবিউটরদের মাধ্যমে প্রতারণা বন্ধে সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে।

পাশাপাশি, নতুন কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে নগদে কর্মরত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হবে না এবং আসন্ন ঈদের আগেই সকলের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার নগদে একজন প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছিল। প্রশাসক দায়িত্ব গ্রহণের পর পরিচালিত নিরীক্ষায় নগদ লিমিটেডে ব্যাপক আর্থিক জালিয়াতির তথ্য বেরিয়ে আসে। এর মধ্যে ছিল অনলাইন জুয়া, মানি লন্ডারিং, সাবেক মালিকদের নামে অর্থপাচার, ভুয়া পরিবেশক ও এজেন্ট দেখিয়ে আর্থিক অনিয়ম এবং কৃত্রিমভাবে ইলেকট্রনিক অর্থ (ই-মানি) তৈরি। এসব জালিয়াতির কারণে প্রতিষ্ঠানে ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার গরমিল পাওয়া যায়।

তদন্তে আরও দেখা যায়, নগদ নিয়মের বাইরে গিয়ে বহু গ্রাহক তৈরি করেছে এবং সরকারি বিভিন্ন ভাতা বিতরণে একচেটিয়া সুবিধা ভোগ করেছে। এসব অনিয়ম যখন ঘটছিল, তখন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের একাধিক সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ২৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে।

মূলত, নগদ (যার প্রাতিষ্ঠানিক নাম থার্ড ওয়েব টেকনোলজিস লিমিটেড) বাংলাদেশ ডাক বিভাগের অধীনে লাইসেন্সপ্রাপ্ত একটি ভেন্ডর এজেন্সি হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছিল। ২৭ মে অনুষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ সভায় ডাক বিভাগ এবং নগদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।