পাকিস্তানের সেনাপ্রধান: ভারতীয় আধিপত্য মানব না, কাশ্মির-পানি ইস্যুতেও ছাড় নয়

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের আধিপত্য তার দেশ কখনোই মেনে নেবে না। দেশের সার্বভৌমত্ব ও কাশ্মির ইস্যুতে পাকিস্তানের অটল অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি পানিকে ‘রেড লাইন’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং ২৪ কোটির বেশি পাকিস্তানির এই মৌলিক অধিকারে কোনো আপস করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) শিক্ষাবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যদের সঙ্গে এক আলোচনায় তিনি এসব মন্তব্য করেন বলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা (আইএসপিআর) জানিয়েছে। খবর এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের।

এ সময় ফিল্ড মার্শাল মুনির কাশ্মির সংকট, ভারতের আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের নীতি এবং পানিবণ্টন ইস্যুতে পাকিস্তানের কঠোর অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান ভারতের বেআইনিভাবে অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মিরের (আইআইওজেকে) বিষয়টি কখনো ভুলে যাবে না। এটি আমাদের জাতীয় স্বার্থের অন্যতম প্রধান ইস্যু।’ দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা ও সামরিক সংঘাতের পর এক অনিশ্চিত যুদ্ধবিরতি চলাকালে তিনি এসব কথা বলেন।

পাকিস্তানের সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত এই ফিল্ড মার্শালের বক্তব্য এমন সময়ে এলো, যখন ভারত সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত এই চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব নদীর ওপর পাকিস্তানের এবং রাভি, বিয়াস ও শতদ্রু নদীর ওপর ভারতের অধিকার রয়েছে। ইসলামাবাদ হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ভারত যদি পাকিস্তানের জলাধারে বাঁধ দিয়ে বা অন্য কোনোভাবে পানি সরানোর চেষ্টা করে, তবে তা ‘যুদ্ধের শামিল’ বলে গণ্য হবে এবং পাকিস্তান এর জবাবে জাতীয় শক্তির সব উপাদান ব্যবহার করবে।

সম্প্রতি ভারতীয় যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালালে দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। এর জবাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ‘অপারেশন বুনিয়ানুম মারসুস’ পরিচালনা করে, যার লক্ষ্য ছিল ভারতের বিমান ঘাঁটি, অস্ত্রাগার ও ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার। ২২ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত চলা এই বৃহত্তর সংঘাতের আনুষ্ঠানিক নাম ছিল ‘মারকা-ই-হক’ (সত্যের লড়াই)। এতে পাকিস্তান রাফালসহ ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করে।

ফিল্ড মার্শাল মুনির আরও বলেন, ‘মারকা-ই-হকে আল্লাহ্ পাকিস্তানকে প্রতিটি স্তরে সাহায্য করেছেন। যখন একটি জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তখন আল্লাহর সাহায্য অবধারিত। পৃথিবীর কোনো শক্তিই তাকে আর পরাজিত করতে পারে না। মারকা-ই-হকই তার প্রমাণ।’

এই সামরিক সংঘাতের সূত্রপাত হয় ভারত-শাসিত কাশ্মিরের পাহালগাম ময়দানে এক ভয়াবহ সশস্ত্র হামলায় ২৬ পর্যটক নিহতের পর। কোনো প্রমাণ বা তদন্ত ছাড়াই দিল্লি এই ঘটনার দায় পাকিস্তানের ওপর চাপায় এবং কূটনৈতিক সমাধানের আন্তর্জাতিক আহ্বান উপেক্ষা করে সামরিক অভিযান শুরু করে বলে পাকিস্তান দাবি করে।

আসিম মুনির বলেন, ‘ভারতকে বুঝতে হবে, পাকিস্তান কখনোই কাশ্মিরকে ভুলবে না। এ বিষয়ে কোনো আপস সম্ভব নয়।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ তুলে ভারত নিজের অভ্যন্তরীণ সমস্যাকে আন্তর্জাতিক রূপ দিতে চাইছে। কিন্তু এই সন্ত্রাসবাদ ভারতের নিজস্ব সমস্যা, যা সংখ্যালঘু বিশেষত মুসলিমদের ওপর চালানো নিপীড়ন থেকে উদ্ভূত। অন্যদিকে কাশ্মির একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ইস্যু।’

বেলুচিস্তানে সহিংসতার জন্যও আসিম মুনির ভারতের মদদপুষ্ট গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘বেলুচিস্তানে সক্রিয় সন্ত্রাসীরা ভারতের মতো বিদেশি শক্তির এজেন্ট। এরা বেলুচ নয়, এরা ভারতের মদদপুষ্ট বিশৃঙ্খলার দোসর।’