ডায়ালাইসিস ও ওষুধের অভাবে গাজায় ৪১% কিডনি রোগীর মৃত্যু

গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং জীবনরক্ষাকারী ওষুধ ও মানবিক সহায়তা সরবরাহে কঠোর নিষেধাজ্ঞার ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্য সংকটে পড়েছেন কিডনি রোগীরা। গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি সময় পর্যন্ত উপত্যকার প্রায় ৪১ শতাংশ কিডনি রোগী চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি চিকিৎসা কর্তৃপক্ষ। আরব নিউজ এই মর্মান্তিক খবর নিশ্চিত করেছে।

আল-কাবি ডায়ালিসিস সেন্টার

ওয়াফা নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার হামলায় গাজার অধিকাংশ হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে অসংখ্য কিডনি রোগী নিয়মিত ডায়ালাইসিস সেবা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হচ্ছেন। জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য এই চিকিৎসা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধের তীব্র সংকটের কারণেই এই বিপুল সংখ্যক রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, কিডনি রোগে আক্রান্তদের মৃত্যুর হার ভবিষ্যতে আরও দ্রুতগতিতে বাড়বে। কারণ, গত শনিবার ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলের বেইত লাহিয়ায় অবস্থিত নুরা আল-কাবি ডায়ালাইসিস সেন্টারটি বুলডোজার দিয়ে সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এই কেন্দ্রটিতে ১৬০ জন কিডনি রোগীর নিয়মিত ডায়ালাইসিসসহ জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা চলছিল।

প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, যুদ্ধের সময়ে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেন্দ্রটি সচল ছিল। কিন্তু ইসরায়েলি সেনারা বুলডোজার ব্যবহার করে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা সেই চিকিৎসাকেন্দ্রটি পুরোপুরি মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়।

একজন ফিলিস্তিনি চিকিৎসক ওয়াফা নিউজ এজেন্সিকে জানিয়েছেন, ‘এই ডায়ালাইসিস কেন্দ্রটি ধ্বংস হওয়া গাজার ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য এক ভয়াবহ আঘাত। এর সুদূরপ্রসারী পরিণতি কী হতে পারে, তা আমরা এখনো পুরোপুরি কল্পনাও করতে পারছি না।’ চিকিৎসকরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, অবশিষ্ট কিডনি রোগীরা এখন আরও চরম ও ভয়াবহ জীবন সংকটের মুখে পড়েছেন।

দীর্ঘদিন ধরে চলমান যুদ্ধ, অপরিহার্য ওষুধের অভাব এবং বিদ্যুৎ সংকটের কারণে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিজেই মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল ইসরায়েলের এ ধরনের মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানালেও, এসব হামলা বন্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। এর সুযোগে ইসরায়েলি বাহিনী একের পর এক হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে হামলা চালিয়ে সেগুলোকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন অবিলম্বে গাজার চিকিৎসা সুবিধাগুলো রক্ষায় জরুরি আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের জোর দাবি জানিয়েছে।