মালিতে ওয়াগনারের প্রস্থান, স্থলাভিষিক্ত ক্রেমলিনের ‘আফ্রিকা কর্পস’
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
রাশিয়ার বিতর্কিত বেসরকারি সেনাগোষ্ঠী ওয়াগনার আনুষ্ঠানিকভাবে মালি থেকে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে। তাদের শূন্যস্থান পূরণ করতে মাঠে নেমেছে ক্রেমলিন-সমর্থিত নতুন সেনাদল ‘আফ্রিকা কর্পস’। সাহেল অঞ্চলের কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে রোববার (৮ জুন) আরব নিউজ এই সংবাদ জানিয়েছে।
মালি থেকে সরে যাচ্ছে ওয়াগনার গোষ্ঠী
সাহেল অঞ্চলের একজন কূটনৈতিক কর্মকর্তা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ওয়াগনার আনুষ্ঠানিকভাবে আর মালিতে নেই। তবে তাদের জায়গায় আফ্রিকা কর্পস সক্রিয় হয়ে উঠেছে।’ অন্যদিকে, ওয়াগনারের সঙ্গে যুক্ত একটি টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে তাদের মিশন সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘পিএমসি ওয়াগনার এখন বাড়ি ফিরছে।’
উল্লেখ্য, ২০২০ ও ২০২১ সালে পরপর দুটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী মালির সামরিক জান্তা সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্সের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে। তখন থেকেই রাশিয়ার এই বিতর্কিত সেনাগোষ্ঠী মালিতে নিরাপত্তা সহায়তা দিয়ে আসছিল। তবে মালি সরকার কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়াগনারের উপস্থিতির কথা স্বীকার করেনি; বরং তারা জানিয়েছিল যে, রুশ প্রশিক্ষকদের সঙ্গেই তারা কাজ করছে।
২০২২ সালে মালির জান্তা সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে তীব্র ফ্রান্স-বিরোধী মনোভাবের কারণে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর প্রশাসন মালি থেকে তাদের ২,৪০০ সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর থেকে মালি পুরোপুরি রাশিয়ার নিরাপত্তা সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এবং ওয়াগনারই মূলত সেই সহায়তা প্রদান করছিল। গত বছর আগস্টে মস্কোর বিরুদ্ধে একটি ব্যর্থ বিদ্রোহের পর ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের রহস্যজনক বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর গ্রুপটি কার্যত ভেঙে পড়ে এবং নতুন করে পুনর্গঠিত হয়।
একটি সূত্র জানিয়েছে, ওয়াগনারের অধিকাংশ সদস্যই ছিলেন রাশিয়ান নাগরিক। তাদের একটি বড় অংশকে এখন আফ্রিকা কর্পসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং তারা রাজধানী বামাকো ও উত্তরাঞ্চলীয় বিভিন্ন শহরে আগের মতোই অবস্থান করছেন।
মালিতে জিহাদবিরোধী লড়াইয়ে ওয়াগনার সেনারা তিন বছরের বেশি সময় ধরে সক্রিয় ছিল। তবে জিহাদি দমনের নামে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে তারা বহুবার সমালোচিত হয়েছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের মার্চে মৌরা অঞ্চলে এক অভিযানে মালির সেনাবাহিনী ও বিদেশি যোদ্ধারা (পশ্চিমা দেশগুলোর মতে ওয়াগনার সদস্য) অন্তত ৫০০ জনকে হত্যা করে, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন সাধারণ মানুষ। এছাড়া, ২০২৩ সালের এপ্রিলে ফুলানি জনগোষ্ঠীর বহু সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর একটি সামরিক ঘাঁটির কাছে গণকবরে তাদের লাশ পাওয়া যায়। তবে মালির জান্তা সরকার বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
ওয়াগনারের এই প্রত্যাহার এমন এক সময়ে ঘটল, যখন মালির সেনাবাহিনী জিহাদিদের নতুন করে সংগঠিত হওয়া এবং তাদের জোরালো হামলার মুখে পড়ছে। সম্প্রতি দুটি বড় হামলায় অসংখ্য সেনা নিহত হয়েছেন এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি সামরিক ঘাঁটি জিহাদিদের দখলে চলে গেছে।
মালির একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘ওয়াগনার হোক কিংবা আফ্রিকা কর্পস, আমাদের সঙ্গে সমন্বয়ের একমাত্র ঠিকানা হলো ক্রেমলিন, অর্থাৎ রাশিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার।’ আরেকজন কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ‘ক্রেমলিনই এখনও সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। মালিতে কর্মরত ওয়াগনারের বেশিরভাগ রুশ সদস্য এখন আফ্রিকা কর্পসে অন্তর্ভুক্ত হবেন এবং উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন শহর ও বামাকোতে তাদের উপস্থিতি বজায় থাকবে।’
সাহেল অঞ্চলে অবস্থানরত এক ইউরোপীয় কূটনীতিকের মতে, ‘আফ্রিকা কর্পস সম্ভবত ওয়াগনারের চেয়ে আরও বেশি করে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করবে।’ ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের বিশ্লেষক বেভারলি ওচিয়েং বলেন, ‘যদিও ওয়াগনার মালির সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করার দাবি করেছে, সাম্প্রতিক হামলার পর আফ্রিকা কর্পসকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।’
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.