মোহাম্মদ সিনওয়ারের মরদেহ উদ্ধার, দাবি ইসরায়েলি বাহিনীর

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, তারা খান ইউনুসের ইউরোপিয়ান হাসপাতালের নিচ থেকে হামাসের গাজা শাখার প্রধান মোহাম্মদ সিনওয়ারের মরদেহ উদ্ধার করেছে। রোববার এক বিবৃতিতে এই দাবি জানায় আইডিএফ। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের।

মোহাম্মদ সিনওয়ার

আইডিএফ মোহাম্মদ সিনওয়ারের মৃতদেহ শনাক্তের প্রমাণ হিসেবে হাসপাতালের নিচে থাকা সুড়ঙ্গের ভিডিও এবং তার ইসরায়েলি আইডি, হামাসের নথি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স সম্বলিত পরিচয়পত্র প্রকাশ করেছে। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডিফ্রিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘তার মরদেহ হাসপাতালের নিচে, জরুরি বিভাগের ঠিক নিচেই একটি কক্ষে পাওয়া যায়। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে।’

এর আগে, তিন সপ্তাহ আগে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পার্লামেন্টের এক অধিবেশনে বিমান হামলায় মোহাম্মদ সিনওয়ারের নিহত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি তখন হামাসের অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি মোহাম্মদ সিনওয়ারের নাম উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘আমরা হামাসের হাজারো সদস্যকে হত্যা করেছি, যার মধ্যে মোহাম্মদ দেইফ, ইসমাইল হানিয়া, ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও মোহাম্মদ সিনওয়ার রয়েছেন।’

আইডিএফ আরও জানায়, গত ১৩ মে ইসরায়েলি সেনা ও গোয়েন্দা সংস্থার এক যৌথ হামলায় সিনওয়ার নিহত হয়েছিলেন। মরদেহ শনাক্ত হওয়ায় বিষয়টি এখন নিশ্চিত হলো। এক ভিডিওবার্তায় আইডিএফ দাবি করে, ‘মোহাম্মদ সিনওয়ার অসংখ্য বেসামরিক নাগরিক হত্যার জন্য দায়ী ছিলেন। তিনি যেমন নীরবে-নিভৃতে জীবন কাটিয়েছেন, তেমনি মারাও গেছেন গোপনে, সাধারণ মানুষের আড়ালে।’ আইডিএফের প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে একটি টানেলের দৃশ্য এবং সিনওয়ারের পরিচয়পত্রগুলো দেখানো হয়েছে, যাতে তার পরিচয় নিয়ে কোনো সন্দেহ না থাকে।

মোহাম্মদ সিনওয়ার ছিলেন হামাসের প্রভাবশালী নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ভাই। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে বিবেচনা করা হয়। তার মৃত্যুর পর মোহাম্মদ সিনওয়ার হামাসের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাল ধরেন বলে মনে করা হয়।

মোহাম্মদ সিনওয়ার ১৯৭৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার ১৯৪৮ সালের নাকবা পরবর্তী সময়ে গাজায় শরণার্থী হিসেবে স্থানান্তরিত হয়েছিল। খান ইউনুসেই তার শৈশব কাটে এবং তিনি ইউএনআরডাব্লিউএ পরিচালিত স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৮৭ সালে হামাসে যোগ দিয়ে তিনি সংগঠনের সশস্ত্র শাখায় দ্রুত পরিচিতি লাভ করেন। তার কৌশলী ও গোপন উপস্থিতির কারণে তিনি ‘ভূত’ নামে পরিচিত ছিলেন।

২০০৬ সালে ইসরায়েলি সেনা গিলাদ শালিতকে অপহরণের ঘটনার সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন। গিলাদ শালিত পাঁচ বছর বন্দি থাকার পর এক হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে মুক্তি পেয়েছিলেন, যে দলে ইয়াহিয়া সিনওয়ারও ছিলেন। হামাসের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় মোহাম্মদ সিনওয়ার মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।