গাজাগামী ত্রাণকর্মী আটক: ইসরায়েলি কারাগারে ব্রাজিলীয় কর্মীর প্রতিবাদী অনশন

গাজাগামী ত্রাণবাহী জাহাজ ‘ম্যাডলিন’-এ আটক ব্রাজিলীয় মানবাধিকার কর্মী থিয়াগো আভিলা অনশন ও পানাহার বর্জন ধর্মঘট শুরু করেছেন। মঙ্গলবার ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা ও আইন কেন্দ্র ‘আদালাহ’ এ তথ্য জানিয়েছে।

থিয়াগো আভিলা

ইসরায়েলি বাহিনী সোমবার ভোরে আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে জাহাজটি জব্দ করে। এ সময় তারা ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন। সেখান থেকে বিভিন্ন দেশের ১২ জন কর্মীকে আটক করা হয়। আটক কর্মীদের মধ্যে ব্রাজিল, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, সুইডেন, স্পেন ও তুরস্কের নাগরিকরা রয়েছেন।

মঙ্গলবার সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ চারজনকে ইসরায়েল থেকে নির্বাসিত করা হয়েছে। বাকি আটজন নির্বাসন আদেশে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করায় তাদের ইসরায়েলের রামলার গিভন কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।

আদালাহ জানিয়েছে, মঙ্গলবার রামলার একটি ডিটেনশন আদালতে আটজনকে হাজির করা হয়, যেখানে ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের নির্বাসনের আদেশ দেয়।

আদালাহ-এর আইনি দলের আইনজীবী হাদিল আবু সালেহ, লুবনা তোমা এবং স্বেচ্ছাসেবী আইনজীবী আফনান খলিফা পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলা শুনানিতে যুক্তি দেন যে, গাজার অবরোধ ভাঙার লক্ষ্যে ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’-এর অংশ ম্যাডলিন জাহাজটিকে আটক করে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।

আইনজীবীরা আরও বলেন, কর্মীদের আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে জোরপূর্বক ইসরায়েলে নিয়ে আসা হয়েছে এবং কোনো আইনি ভিত্তি ছাড়াই তাদের ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

আইনজীবীরা গাজার ওপর ইসরায়েলি অবরোধকে একটি বেআইনি সম্মিলিত শাস্তি হিসেবে নিন্দা করেছেন, যার লক্ষ্য বেসামরিক নাগরিকদের অনাহারে রাখা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা গণহত্যা মামলায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের জারি করা অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ লঙ্ঘন করা। তারা দাবি করেন, গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া কর্মীদের আইনগত অধিকারের মধ্যেই পড়ে, যেখানে বাসিন্দারা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

আইনজীবীরা কর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি এবং তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আগে গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর অসমাপ্ত মিশন শেষ করার জন্য ম্যাডলিন জাহাজে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান।

সংস্থাটি জানায়, যেহেতু জাহাজটি আন্তর্জাতিক জলসীমায় আটক করা হয়েছে, তাই ইসরায়েলের কোনো বিচারিক এখতিয়ার নেই। ফলে এই আটক ও নির্বাসনের আদেশ বেআইনি।

আদালাহ জানায়, আটক কর্মীরা অভিযোগ করেছেন যে তাদের 'অপহরণ' করে জোরপূর্বক ইসরায়েলে আনা হয়েছে। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে গাজাবাসীর কাছে ত্রাণ পৌঁছানো। তারা কারাগারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, বিশেষ করে ছারপোকা এবং পানের অযোগ্য ট্যাপের পানির বিষয়েও অভিযোগ করেছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ করতে অস্বীকারকারীদের ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত আটকে রাখার অনুমতি দেওয়া ‘এন্ট্রি ল’ অনুযায়ী, নির্বাসনের আগ পর্যন্ত কর্মীদের আটক রাখতে আদালতের কাছে আবেদন করেছে।

সংস্থাটি কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং আদালত শীঘ্রই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে বলে আশা করছে।

উল্লেখ্য, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় এক নৃশংস অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে প্রায় ৫৫,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উপত্যকায় যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার মামলারও মুখোমুখি।