উন্মুক্ত রহস্য: ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার নিয়ে বিশ্ব নীরব কেন?
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বিশ্বজুড়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও উত্তেজনা থাকলেও, মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ ইসরায়েলের পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের নীরবতা এক বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা একমত যে, ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের আগে থেকেই ইসরায়েলের কাছে পারমাণবিক বোমা রয়েছে। তবে আজ পর্যন্ত দেশটি এ বিষয়ে ‘উদ্দেশ্যমূলক অস্পষ্টতা’র নীতি বজায় রেখেছে।
ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমিতে দিমোনা পারমাণবিক কেন্দ্র। (ফাইল ছবি, ৮ সেপ্টেম্বর ২০০২)। সৌজন্যে: এএফপি
স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট (সিপ্রি), যা ১৯৬৬ সাল থেকে বিশ্বের পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর নজর রাখছে, তাদের সাম্প্রতিক এক হিসাবে জানিয়েছে যে ইসরায়েলের কাছে অন্তত ৯০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে।
সিপ্রির মতে, এই ওয়ারহেডগুলো ৪,৫০০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত নিক্ষেপযোগ্য। এর জন্য ইসরায়েল ব্যবহার করে এফ-১৫, এফ-১৬১, এফ-৩৫আই ‘আদির’ যুদ্ধবিমান, ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ৫০টি জেরিকো-২ ও জেরিকো-৩ ক্ষেপণাস্ত্র এবং সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য প্রায় ২০টি পোপাই টার্বো ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র।
আন্তর্জাতিক আইন ও দ্বিমুখী নীতি
আশ্চর্যের বিষয় হলো, ইরান পারমাণবিক অস্ত্রবিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি)-তে স্বাক্ষরকারী দেশ হলেও ইসরায়েল এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) যখন বলছে যে ইরানের কর্মসূচিটি মূলত জ্বালানি শক্তির জন্য, তখন ইসরায়েলের অস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কেন প্রশ্ন তুলছে না, সেই বিতর্ক ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।
গত মার্চে ভিয়েনায় আইএইএ-এর বোর্ড অফ গভর্নরসের বৈঠকে কাতার ইসরায়েলের সমস্ত পারমাণবিক স্থাপনাকে আইএইএ-এর সুরক্ষার অধীনে আনার এবং দেশটিকে এনপিটি-তে যোগদানের জন্য ‘আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার’ করার আহ্বান জানায়।
কিন্তু ইসরায়েল বরাবরই এনপিটিতে স্বাক্ষর করতে বা আইএইএ-এর সঙ্গে সহযোগিতা করতে অস্বীকার করে আসছে। অনেকেরই অজানা একটি তথ্য হলো, ১৯৮১ সাল থেকে ইসরায়েল জাতিসংঘের ৪৮৭ নম্বর প্রস্তাব লঙ্ঘন করে চলেছে। ১৯৮১ সালের ৭ জুন ইসরায়েল ইরাকের একটি পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রে হামলা চালালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এই প্রস্তাবটি পাস করে। প্রস্তাবে ইসরায়েলকে তার পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আইএইএ-এর তত্ত্বাবধানে রাখার আহ্বান জানানো হয়েছিল, যা ইসরায়েল আজও মানেনি।
ইসরায়েলের ‘স্যামসন অপশন’ ও পারমাণবিক হামলার হুমকি
ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে একমাত্র আনুষ্ঠানিক অবস্থান হলো—‘মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র তারা আনবে না’। তবে দেশটির নীতিনির্ধারকরা এর ব্যাখ্যায় বলেন, ‘অস্ত্র আনা’ বলতে প্রকাশ্যে ঘোষণা, পরীক্ষা বা ব্যবহার করাকে বোঝানো হয়েছে, যা ইসরায়েল এখনো করেনি।
তবে গত বছরের নভেম্বরে গাজা যুদ্ধের সময় ইসরায়েলের ঐতিহ্যমন্ত্রী আমিচাই ইলিয়াহু মন্তব্য করেন, ‘গাজায় এক ধরনের পারমাণবিক বোমা ফেলে সবাইকে মেরে ফেলা উচিত।’ যদিও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দ্রুত তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করেন এবং ইলিয়াহু পরে তার বক্তব্যকে ‘রূপক’ বলে দাবি করেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের এই গোপন পরিকল্পনাটির নাম ‘স্যামসন অপশন’। এটি এক ধরনের প্রতিশোধমূলক ধ্বংসের নীতি। এর অস্তিত্ব ইসরায়েল কখনো স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করেনি। বাইবেলের চরিত্র স্যামসনের নামে এই পরিকল্পনার নামকরণ করা হয়েছে, যিনি শত্রুদের মন্দিরের স্তম্ভ টেনে নামিয়ে শত্রুদের সঙ্গে নিজেকেও ধ্বংস করেছিলেন।
ইতিহাস বলছে, ইসরায়েল দুইবার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল—একবার ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে এবং আরেকবার ১৯৭৩ সালের ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধে।
তথ্য ফাঁসকারী ভানুনু ও কঠোর গোপনীয়তা
১৯৮৬ সালে মোর্দেখাই ভানুনু নামে একজন ইসরায়েলি পারমাণবিক টেকনিশিয়ান দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির গোপন তথ্য ফাঁস করে দেন। এরপর মোসাদের নারী এজেন্টের ফাঁদে ফেলে তাকে রোম থেকে অপহরণ করে ইসরায়েলে ফিরিয়ে আনা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাকে ১৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যার বড় একটি অংশ তাকে নির্জন কারাবাসে কাটাতে হয়েছে। ২০০৪ সালে মুক্তি পেলেও তার ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যার ফলে তিনি ইসরায়েল ত্যাগ করতে বা কোনো বিদেশির সঙ্গে কথা বলতে পারেন না।
কিংস কলেজ লন্ডনের ওয়ার স্টাডিজ বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক আহরন ব্রেগম্যানের মতে, ‘ভানুনুকে আটক করা এবং তার ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করাই প্রমাণ করে যে ইসরায়েলের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র আছে।’
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলিরা এখন এতটাই ভীত যে সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে কেউ নতুন করে তথ্য ফাঁস করার সাহস দেখাবে না। কারণ তারা জানে, গোপন তথ্য ফাঁস করলে তাদের অপহরণ করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হবে।
আরব নিউজ অবলম্বনে
লেখক: জোনাথন গোর্নল; অনুবাদ করেছেন: মো. জামাল উদ্দিন
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.