কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরানের দাঁতভাঙা জবাব!

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এর দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছে ইরান। রবিবার ভোরে ইসরায়েলের একাধিক শহর লক্ষ্য করে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। এই হামলার পর ইসরায়েলও পাল্টা আক্রমণ শুরু করলে পরিস্থিতি একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে মোড় নেওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ইসরায়েলের তেল আবিবে ইরানি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। ছবিটি ২২ জুন, ২০২৫-এ তোলা।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ‘ইসরায়েল হায়োম’-এর তথ্য অনুযায়ী, ইরান অন্তত ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো হাইফা, তেল আবিবসহ উপকূলীয় এবং মধ্যবর্তী অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হেনেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ‘কান’ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো অন্তত ১০টি ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় পড়েছে।

হামলার পরপরই মধ্য ও উত্তরাঞ্চলীয় ইসরায়েল, বিশেষ করে হাইফা শহরে সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে ওঠে। ‘চ্যানেল ১৪’ নিশ্চিত করেছে যে ইরানের পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি ইসরায়েলি ভূখণ্ডে আঘাত হেনেছে, যার মধ্যে তিনটি হাইফা এলাকায় এবং দুটি মধ্য ইসরায়েলে। এদিকে ‘চ্যানেল ১২’ হাইফায় বিস্ফোরণের পর সেখানে একটি ‘অস্বাভাবিক ঘটনা’ ঘটেছে বলে জানিয়েছে।

ইসরায়েলের দৈনিক ‘ইয়েদিওত আহরোনোত’ জানায়, হাইফা শহরে ব্যাপক কাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। তেল আবিব ও এর আশপাশের এলাকাতেও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। ‘কান’ আরও জানায়, তেল আবিবের একটি ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে এবং উপকূলীয় অঞ্চলে বেশ কিছু ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে।

ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা ‘ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম’ জানিয়েছে, তাদের কর্মীরা একাধিক ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। প্রাথমিকভাবে ১১ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও পরে ‘চ্যানেল ১৩’ জানায়, আহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে। ‘ইয়েদিওত আহরোনোত’ নিশ্চিত করেছে যে এই ঘটনায় অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগের আঘাতই সামান্য। তবে একজনের অবস্থা মাঝারি ধরনের।

ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য

ইরানের সামরিক অভিযান ‘আল-ওয়াদ আল-সাদিক ৩’-এর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার লক্ষ্য ছিল বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর, জৈব গবেষণা কেন্দ্র এবং ইসরায়েলের কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র।

এর জবাবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আভিচাই আদ্রায়ি নিশ্চিত করেছেন যে, ইসরায়েলি বিমানবাহিনী পশ্চিম ইরানে অবস্থিত ইরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে পাল্টা হামলা চালিয়েছে। তিনি দাবি করেন, যেসব ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে ইসরায়েলে হামলা চালানো হয়েছিল, সেগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে এবং নতুন হামলার প্রস্তুতি নেওয়া ইরানি সেনাদেরও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

সংঘাতের প্রেক্ষাপট

এই উত্তেজনার শুরু হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ঘোষণার পর। রবিবার তিনি জানান, মার্কিন বাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় ‘অত্যন্ত সফল’ বিমান হামলা চালিয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে ইসরায়েল ইরানের কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ও পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করে। মার্কিন গণমাধ্যম জানায়, ওই হত্যাকাণ্ডের পরই ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের অনুমোদন দিয়েছিলেন। মার্কিন হামলার আগে পেন্টাগন মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের বিমানঘাঁটি থেকে বি-২ বোমারু বিমান পারস্য উপসাগরের দিকে সরিয়ে নেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ইরান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জরুরি বৈঠক ডেকে মার্কিন আগ্রাসনের নিন্দা জানানোর আহ্বান জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের একাধিক সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালালে এই সংঘাতের সূত্রপাত হয়। এরপর থেকে ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ২৫ জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। অন্যদিকে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলি হামলায় ইরানে এখন পর্যন্ত ৪৩০ জন নিহত এবং সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।