লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে বড় ধরনের বিপদের মুখে মার্কিন জাহাজ!

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চালানো ভয়াবহ বিমান হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এই উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে লোহিত সাগর, বাব আল-মান্দেব প্রণালী এবং এডেন উপসাগর দিয়ে চলাচলকারী মার্কিন-সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক জাহাজের জন্য সর্বোচ্চ মাত্রার ঝুঁকি ঘোষণা করা হয়েছে।

লোহিত সাগর

রবিবার যৌথ সামুদ্রিক তথ্য কেন্দ্র (জেএমআইসি) এক জরুরি সতর্কবার্তায় এই ঘোষণা দেয়। কেন্দ্রটি জানায়, ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক পদক্ষেপের পর এই অঞ্চলের পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে এবং মার্কিন বাণিজ্যিক জাহাজগুলো এখন হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে।

এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক ঘোষণায় জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় ‘অত্যন্ত সফল’ বিমান হামলা চালিয়েছে। এই হামলার পর থেকেই পুরো অঞ্চলে একটি বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা তীব্রতর হয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান থেকে ইরানের ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্রে ছয়টি শক্তিশালী বাংকার-বিধ্বংসী বোমা ফেলা হয়। একই সঙ্গে নাতাঞ্জ এবং ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ডুবোজাহাজ থেকে কয়েক ডজন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়।

এই পরিস্থিতিতে ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুথি আন্দোলন সরাসরি মার্কিন জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করার হুমকি দিয়েছে। হুথিদের সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি এক বিবৃতিতে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো ধরনের সামরিক পদক্ষেপে অংশ নেয়, তবে হুথি যোদ্ধারা মার্কিন বাণিজ্যিক জাহাজ ও যুদ্ধজাহাজের ওপর হামলা চালাবে।

যৌথ সামুদ্রিক তথ্য কেন্দ্র তাদের সতর্কবার্তায় আরও উল্লেখ করেছে, ‘ইরানের মদদপুষ্ট হুথিদের লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটানোর পূর্ব ইতিহাস রয়েছে এবং তারা এর আগেও সমুদ্রে মার্কিন ও ইসরায়েলি স্বার্থের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল।’

মার্কিন-সংশ্লিষ্ট জাহাজ বলতে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাবাহী, মার্কিন মালিকানাধীন, পরিচালিত, ভাড়া করা অথবা মার্কিন পণ্য পরিবহনকারী যেকোনো জাহাজকে বোঝানো হয়েছে।

সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘আঞ্চলিক উত্তেজনার কারণে এই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ জলপথগুলোতে নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’ কেন্দ্রটি মার্কিন-সংশ্লিষ্ট জাহাজ অপারেটরদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন এবং সম্ভব হলে বিকল্প পথ ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন জাহাজগুলোর জন্য ঝুঁকির মাত্রা বর্তমানে কম বলে জানানো হয়েছে। তবুও সেইসব জাহাজকেও সামুদ্রিক নিরাপত্তার সর্বোত্তম অনুশীলনগুলো মেনে চলার এবং যেকোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ চোখে পড়লে যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনসকে (ইউকেএমটিও) জানানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।