সংঘাত এড়াতে ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার আহ্বান জার্মানির

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা কমাতে এবং সংঘাতের আরও অবনতি এড়াতে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে জার্মানি। সোমবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের আগে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ওয়াডেফুল এই আহ্বান জানান।

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ওয়াডেফুল

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ওয়াডেফুল বলেন, গত সপ্তাহের জেনেভা বৈঠকে জার্মানির পক্ষ থেকে ইরানকে যে বার্তা দেওয়া হয়েছিল, তা তারা যথাযথভাবে আমলে নেয়নি। এর ফলস্বরূপ সপ্তাহান্তে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বিমান হামলা চালানো হয়। তিনি বলেন, “আমরা তখন ইরানি পক্ষকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে এই সংকট সমাধানের অপরিহার্য পূর্বশর্ত হলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসার ইচ্ছা পোষণ করা। আমাদের সেই বার্তাটি তখন পুরোপুরি বোঝা সম্ভব হয়নি, তাই আমরা এখন আবারও তার পুনরাবৃত্তি করছি।”

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, বিশ্ব একটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী ইরানকে কখনোই মেনে নেবে না। তিনি আরও বলেন, “আমরা ইউরোপের দেশগুলো, এমনকি ইসরায়েল এবং পুরো অঞ্চলের স্বার্থেই ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি সীমিত করতে চাই। এই বিষয়টি অবশ্যই আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”

ওয়াডেফুল জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় একটি সমঝোতামূলক সমাধান খুঁজে বের করা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি জরুরি। এ লক্ষ্যে জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যকে নিয়ে গঠিত ‘ই-৩’ জোট ইরানকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

গাজা পরিস্থিতি ও ইসরায়েল প্রসঙ্গ

ব্রাসেলসের বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্যের সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং গাজার মানবিক বিপর্যয় নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানান জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, “গাজা উপত্যকা আমাদের আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেখানকার মানবিক পরিস্থিতি এখনও অগ্রহণযোগ্য।” ওয়াডেফুল যোগ করেন, ইসরায়েলি সরকারকে আরও বেশি মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিতে রাজি করানোর জন্য বার্লিন তার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

তবে, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরায়েলের সঙ্গে ইইউর অংশীদারত্ব চুক্তি স্থগিত করার জন্য স্পেন ও আয়ারল্যান্ডের আহ্বানের বিরোধিতা করেন তিনি। ওয়াডেফুল বলেন, “জার্মান সরকার মনে করে না যে ইসরায়েলের সঙ্গে ইইউর চুক্তি স্থগিত করা উচিত। আমাদের ইসরায়েলের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা প্রয়োজন। ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং জার্মানি স্বাভাবিকভাবেই দেশটির সঙ্গে একটি বিশেষ উপায়ে সংযুক্ত। আমি এই বিষয়ে আর কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনার বিপক্ষে।”

উল্লেখ্য, জার্মানি দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের একনিষ্ঠ সমর্থক। দেশটির রাজনৈতিক নেতারা নাৎসি অতীত এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিদের ওপর সংঘটিত অপরাধের কারণে ইসরায়েলের প্রতি তাদের ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতার কথা বারবার উল্লেখ করেছেন। তবে সমালোচকদের মতে, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের প্রতি জার্মানির এই সমর্থন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটির বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ণ করছে এবং বার্লিনকে বিশ্বমঞ্চে আরও একঘরে করে ফেলছে।

২০২৩ সালে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। গাজায় চালানো কর্মকাণ্ডের জন্য ইসরায়েল বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার মামলার মুখোমুখি হয়েছে। সেখানে প্রায় ১৯ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত এবং খাদ্য, চিকিৎসা সামগ্রী ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের তীব্র সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।