গাজা পরিস্থিতি বিপর্যয়কর: ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বেগ

গাজার মানবিক পরিস্থিতিকে ‘বিপর্যয়কর’ আখ্যা দিয়ে সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইসরায়েলের সঙ্গে জোটের সহযোগী চুক্তি পর্যালোচনার পর সংস্থাটি জানিয়েছে, গাজায় যা ঘটছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

ম্যাপে গাজা উপত্যকার অবস্থান

বৃহস্পতিবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলনে জোটের নেতারা এই কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেন। সম্মেলনের পর ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন এবং পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।

ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা বলেন, “গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। ইসরায়েল আমাদের সহযোগী চুক্তি কতটা মেনে চলছে তা পর্যালোচনা করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, সেখানকার পরিস্থিতি অগ্রহণযোগ্য।” তিনি আরও জানান, ইইউ-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইসরায়েলের সঙ্গে একটি ‘খোলামেলা সংলাপের’ প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে পরবর্তী সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবেন।

একই সুরে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন গাজার মানবিক পরিস্থিতিকে "ভয়াবহ ও অসহনীয়" বলে অভিহিত করেন এবং সেখানে অবিলম্বে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর আহ্বান জানান।

সম্মেলনে ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও আলোচনা হয়। আন্তোনিও কস্তা একটি সমন্বিত ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়ে বলেন, “আমাদের ২৭টি সদস্যরাষ্ট্রে একই ধরনের সামরিক বিনিয়োগের পুনরাবৃত্তি করার প্রয়োজন নেই। আমাদের যা প্রয়োজন তা হলো দক্ষতা বৃদ্ধি এবং একটি সুষম দায়ভার বণ্টন।”

ইউক্রেনের নিরাপত্তা ইউরোপের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি জড়িত উল্লেখ করে তিনি কিয়েভকে সমর্থন এবং ইইউতে দেশটির সদস্যপদ লাভের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, ইউক্রেন যত শক্তিশালী হবে, তারা তত ভালোভাবে আত্মরক্ষা করতে পারবে এবং ইউরোপের সামগ্রিক নিরাপত্তায় অবদান রাখতে পারবে।

বাণিজ্য বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনার অগ্রগতি হচ্ছে বলেও জানান ভন ডার লিয়েন। তিনি বলেন, “আমরা একটি চুক্তির জন্য প্রস্তুত। তবে একই সাথে, কোনো সন্তোষজনক চুক্তি না হওয়ার সম্ভাবনার জন্যও আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইউরোপীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অর্থাৎ, সকল বিকল্পই খোলা থাকছে।”

এদিকে, সম্মেলনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে লিবিয়া পরিস্থিতি এবং তুরস্ক ও লিবিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত বিতর্কিত সমুদ্রসীমা নির্ধারণী সমঝোতা স্মারকের বিষয়টিও উঠে আসে। ইইউ স্পষ্ট জানিয়েছে, এই চুক্তিটি তৃতীয় রাষ্ট্রের (যেমন গ্রিস) সার্বভৌম অধিকার লঙ্ঘন করে, এটি আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং অন্য কোনো দেশের জন্য এর কোনো আইনগত বৈধতা থাকতে পারে না। সম্মেলনের আগে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোতাকিস এই বিষয়টি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জোরালো অনুরোধ জানিয়েছিলেন।