আপনি পড়ছেন

প্রায় তিন দশকের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে এক ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (ডিআর কঙ্গো) ও রুয়ান্ডা। শুক্রবার (২৭ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি সম্পাদনে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতার। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

dr congo and rwanda signing of a peace agreementচুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে কঙ্গো ও রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা

চুক্তির আওতায় আগামী ৩০ দিনের মধ্যে একটি যৌথ নিরাপত্তা সমন্বয় কাঠামো এবং ৯০ দিনের মধ্যে একটি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতি পরিকল্পনা চালু করা হবে। এর পাশাপাশি, তিন মাসের মধ্যে ডিআর কঙ্গো থেকে রুয়ান্ডার সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হবে।

চুক্তি অনুযায়ী, আগামী ৩০ দিনের মধ্যে একটি যৌথ নিরাপত্তা সমন্বয় ব্যবস্থা এবং ৯০ দিনের মধ্যে একটি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতি পরিকল্পনা কার্যকর করা হবে। এছাড়া, তিন মাসের মধ্যে কঙ্গোর মাটি থেকে রুয়ান্ডার সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।

চলতি বছর রুয়ান্ডা-সমর্থিত এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হামলায় পূর্ব কঙ্গোর উত্তর ও দক্ষিণ কিভু প্রদেশে সহস্রাধিক মানুষ নিহত এবং লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডার গণহত্যার পর থেকে চলমান এই সংঘাতের এটিই ছিল সর্বশেষ ভয়াবহ রূপ।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে কঙ্গোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেরেস কায়িকোয়াম্বা ওয়াগনার বলেন, ‘এই মুহূর্তটির জন্য আমাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। এটি হয়তো অতীতের যন্ত্রণা মুছে দেবে না, কিন্তু নিরাপত্তা, মর্যাদা ও ভবিষ্যতের আশা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।’

অন্যদিকে, রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অলিভিয়ের নডুহুংগিরেহে চুক্তিটিকে একটি ‘ঐতিহাসিক মোড়’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে কঙ্গোর প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ১৯৯৪ সালের গণহত্যার সঙ্গে জড়িত হুতু গোষ্ঠীভুক্ত এফডিএলআর বিদ্রোহীদের সমর্থন দেওয়া বন্ধ করে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চুক্তিতে এম২৩ বিদ্রোহীদের প্রত্যাহারের বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না থাকায় অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন। এম২৩ গোষ্ঠীটি বর্তমানে উত্তর ও দক্ষিণ কিভুর রাজধানী শহরগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে এবং সেখানে স্থানীয় প্রশাসনও পরিচালনা করছে। জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই বিদ্রোহীদের সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য রুয়ান্ডাকে অভিযুক্ত করে আসছে। তবে রুয়ান্ডা বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে একে কঙ্গোর অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে দাবি করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই শান্তি চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কঙ্গোর কৌশলগত খনিজ সম্পদ—ট্যানটালাম, সোনা, কোবাল্ট, তামা ও লিথিয়ামে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে চাইছে। চুক্তি স্বাক্ষরের আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বক্তব্যে দাবি করেন, ‘আমরা কঙ্গো থেকে প্রচুর খনিজ সম্পদ আহরণের অধিকার পাচ্ছি। এটি আমাদের জন্য একটি সম্মানের বিষয়।’

এই চুক্তির মধ্যস্থতায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা ও লেবানিজ-বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্যবসায়ী মাসাদ বুলোসের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও চুক্তিটিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘এটি শুধু একটি যুদ্ধ থামানোর উদ্যোগ নয়, বরং মানুষের স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ ফিরিয়ে আনার একটি সুযোগ। যুদ্ধ কেড়ে নিয়েছিল পরিবার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক অধিকারগুলো।’

বিশ্লেষকরা এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক অগ্রগতি হিসেবে দেখলেও, শিগগিরই যে এই অঞ্চলে সংঘাত পুরোপুরি থেমে যাবে, তেমনটা আশা করছেন না। উল্লেখ্য, ১৯৯০-এর দশক থেকে এখন পর্যন্ত এই অঞ্চলের সংঘাতে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যা আফ্রিকার ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। তাই এখানে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ হবে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.