ইরানের পরমাণু সক্ষমতা অটুট: কয়েকমাসেই ফিরবে উৎপাদনে, বলছে আইএইএ

সাম্প্রতিক মার্কিন হামলা সত্ত্বেও ইরান মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই পুনরায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন শুরু করতে সক্ষম। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তার মতে, হামলায় ইরানের পরমাণু স্থাপনার মারাত্মক ক্ষতি হলেও তাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও শিল্প সক্ষমতা অক্ষত রয়েছে।

রাফায়েল গ্রোসি

শনিবার মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাফায়েল গ্রোসি বলেন, ‘আমি বলব, কয়েক মাসের মধ্যেই তারা কয়েকটি সেন্ট্রিফিউজ চালু করে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন শুরু করতে পারে, এমনকি তার আগেও।’ তিনি আরও বলেন, মার্কিন হামলায় ইরানের পরমাণু স্থাপনার `মারাত্মক ক্ষতি হলেও তা পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি।’ তার মতে, ‘ইরানের সেই সক্ষমতা, শিল্প ও প্রযুক্তিগত সামর্থ্য রয়েছে। সুতরাং তারা চাইলেই আবার এই কাজ শুরু করতে পারবে।’

উল্লেখ্য, গত ২২ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে দেশটির ফোরদো পরমাণু কেন্দ্রে ছয়টি বাঙ্কার বিধ্বংসী বোমা এবং নাতাঞ্জ ও ইসফাহানের স্থাপনাগুলোতে কয়েক ডজন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। হামলার পর ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করেছিল, ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে ‘নির্মূল’ করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্মসূচিটি কেবল কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে পড়েছে, যা মার্কিন দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি মার্কিন ও ইসরায়েলি হামলায় দেশের পরমাণু কেন্দ্রগুলোতে ‘ব্যাপক ও গুরুতর’ ক্ষতির কথা স্বীকার করেছেন। তবে গ্রোসির মতে, ‘ইরানের একটি অত্যন্ত ব্যাপক ও উচ্চাভিলাষী কর্মসূচি ছিল এবং তার কিছু অংশ এখনও অক্ষত থাকতে পারে। আর যদি নাও থাকে, তবে এই সত্যটি স্বতঃসিদ্ধ যে তাদের জ্ঞান রয়ে গেছে। শিল্প সক্ষমতাও বর্তমান। এটা স্পষ্ট যে, পারমাণবিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ইরান একটি অত্যন্ত অগ্রসর দেশ। আপনি এই জ্ঞানকে মুছে ফেলতে পারবেন না।’

আইএইএ প্রধান আরও জানান, ইরানের কয়েকটি অঘোষিত স্থানে ইউরেনিয়ামের অব্যাখ্যাত চিহ্ন পাওয়া গেছে, যার উৎস সম্পর্কে তেহরান কোনো বিশ্বাসযোগ্য উত্তর দেয়নি। ইরানের কাছে ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ প্রায় ৪০৮.৬ কিলোগ্রাম ইউরেনিয়ামের মজুদ ছিল, যা দিয়ে নয়টিরও বেশি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব। এই মজুদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে গ্রোসি বলেন, ‘হামলার অংশ হিসেবে এর কিছু অংশ ধ্বংস হয়ে থাকতে পারে, আবার কিছু অংশ অন্যত্র সরিয়েও ফেলা হতে পারে। তাই এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে।’ একারণেই যত দ্রুত সম্ভব পরিদর্শকদের পুনরায় কাজ শুরু করার অনুমতি দিতে ইরানের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

কিন্তু শনিবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাকচি জানান, তারা গ্রোসিকে দেশে প্রবেশ করতে দেবে না। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইরানের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন।

এই উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে রয়েছে সাম্প্রতিক ইসরায়েল-ইরান সংঘাত। গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের সামরিক, পারমাণবিক ও বেসামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা শুরু করলে ১২ দিনব্যাপী এই সংঘাতের সূচনা হয়। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এতে কমপক্ষে ৬০৬ জন নিহত এবং ৫,৩৩২ জন আহত হন। এর জবাবে তেহরানও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ও চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) হামলা চালায়। জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই পাল্টা হামলায় অন্তত ২৯ জন নিহত এবং ৩,৪০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। গত ২৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর এই সংঘাতের অবসান ঘটে।