গাজায় ফের ইসরায়েলি বিমান হামলা, ৭২ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজা উপত্যকায় রাতভর ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৭২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানানো হয়েছে। প্রায় দুই বছর ধরে চলা সংঘাতের পর যখন যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হচ্ছে, ঠিক তখনই এই রক্তক্ষয়ী হামলার ঘটনা ঘটলো।

ম্যাপে গাজা উপত্যকার অবস্থান

নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের পাঁচজন রয়েছেন, যাদের মধ্যে তিনটি শিশুও ছিল। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের কাছে মুওয়াসি এলাকার একটি শিবিরে ঘুমন্ত অবস্থায় বোমার আঘাতে তারা প্রাণ হারান। তাদের শোকাহত দাদি সুয়াদ আবু তেইমা কাঁদতে কাঁদতে প্রশ্ন করেন, “এই শিশুরা কী অপরাধ করেছিল?” শোকার্ত স্বজনেরা মৃতদেহগুলোর ওপর ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান।

শিফা হাসপাতালের কর্মীরা জানিয়েছেন, গাজা শহরের ফিলিস্তিন স্টেডিয়ামের কাছে অন্য এক হামলায় ১২ জন এবং নিকটবর্তী একটি ভবনে আরও ৮ জন নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য ওই স্টেডিয়ামটিকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। এ ছাড়া, নাসের হাসপাতালে ২০টিরও বেশি মরদেহ আনা হয়েছে।

আল-আহলি হাসপাতালের তথ্যমতে, পূর্ব গাজা শহরের একটি সড়কের ওপর চালানো হামলায় ১১ জন এবং অন্য একটি এলাকায় আরও ৮ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে পাঁচজনই ছিল শিশু। এদিকে, আল-আওদা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে বুরেজ শরণার্থী শিবিরের প্রবেশপথে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা

এরই মধ্যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার জানিয়েছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা গাজা নিয়ে কাজ করছি এবং এর একটি সমাধান করার চেষ্টা করছি।”

একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সেখানে তিনি গাজা, ইরান এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। গত মার্চে আগের যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনা থেমে থেমে চলছিল।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার সময় অপহৃত ২৫১ জনের মধ্যে প্রায় ৫০ জন জিম্মি এখনো গাজায় রয়েছেন, যাদের অর্ধেকেরও কম জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা নতুন করে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। ইয়োতাম কোহেন নামের এক ব্যক্তির ভাই জিম্মি রয়েছেন। তিনি শনিবার হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “গাজায় ধ্বংস করার মতো আর কী বাকি আছে? নির্মূল করার জন্যই বা কে অবশিষ্ট আছে?”

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৬,০৮৯ জনই মারা গেছেন সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি অবসানের পর। মন্ত্রণালয় জানায়, নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু।

তবে ইসরায়েল বরাবরই দাবি করে আসছে যে, তাদের সামরিক বাহিনী শুধুমাত্র হামাস যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে এবং বেসামরিক হতাহতের জন্য হামাসকেই দায়ী করছে। তাদের অভিযোগ, হামাস ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করে।

খাবার সংকট ও ত্রাণ বিতরণে বিশৃঙ্খলা

এদিকে মানবিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করায়, ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা খাবারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত এক মাসে শুধুমাত্র খাবার সংগ্রহের চেষ্টাকালে ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছেন, ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ভিড় করা মানুষের ওপর ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালায়। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা শুধুমাত্র সতর্কতামূলক গুলি ছুড়েছিল এবং ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে।

শনিবার ত্রাণবাহী গাড়ির জন্য অপেক্ষারত দুই ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের মরদেহ আল-শিফা এবং আল-আওদা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সর্বশেষ ঘটনাগুলো নিয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।