অগ্নিগর্ভ ইউরোপ: দাবদাহ ও দাবানলের জোড়া ছোবলে বিপর্যস্ত জনজীবন

গ্রীষ্মের প্রথম বড় তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে দক্ষিণ ইউরোপ। ইতালি, স্পেন, গ্রিস, পর্তুগাল ও ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে, যা জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। তীব্র গরমের কারণে দেশগুলো সর্বোচ্চ সতর্কতা জারির পাশাপাশি দাবানলের ঝুঁকির বিষয়েও হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

ছবি - সংগৃহীত

পর্তুগালের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা উচ্চ সতর্কতার আওতায় আনা হয়েছে। দেশটির রাজধানী লিসবনে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রিতে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে ভয়াবহ দাবানলের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। স্পেনের সেভিল শহরেও তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে। দেশটির আবহাওয়া সংস্থা ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ সতর্কতা জারি করে বলেছে, এই দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ তাপমাত্রা তাদের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করতে পারে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জনসাধারণকে সরাসরি সূর্যের আলো এড়িয়ে চলতে, প্রচুর পানি পান করতে এবং বয়স্ক ও দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন।

ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোম, মিলান ও নেপলসসহ দেশটির ২৭টি বড় শহরের মধ্যে ২১টিতেই সর্বোচ্চ ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছে। লাৎসিও, টাস্কানি এবং উমব্রিয়ার মতো অঞ্চলগুলো দিনের সবচেয়ে গরম সময়ে খোলা জায়গায় কাজ স্থগিত রাখার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। সিসিলি ও লিগুরিয়ায় ইতোমধ্যে খোলা জায়গায় কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং শ্রমিক সংগঠনগুলো এই ব্যবস্থা সারাদেশে বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।

ফ্রান্সেও চরম তাপমাত্রার জন্য দেশের ১০১টি বিভাগের মধ্যে ৮৪টিতেই সতর্কতা জারি করা হয়েছে, যেখানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কয়েকটি অঞ্চলে দাবানলের কারণে পর্যটন কেন্দ্র এবং একটি গির্জা থেকে মানুষজনকে সরিয়ে নিতে হয়েছে। মার্সেই শহরে বাসিন্দাদের স্বস্তি দিতে গণসুইমিংপুলগুলো বিনামূল্যে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

গ্রিসে রাজধানী এথেন্সের দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়া একটি বড় দাবানল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। পাঁচটি এলাকা থেকে স্থানীয়দের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং আগুন লাগার কারণে প্রাচীন পসাইডন মন্দিরের নিকটবর্তী উপকূলীয় মহাসড়কের একটি অংশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, যুক্তরাজ্যেও বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য ‘অ্যাম্বার’ ও ‘ইয়েলো’ হিট-হেলথ অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে, যেখানে তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। লন্ডন ফায়ার ব্রিগেড চলমান শুষ্ক আবহাওয়ায় মারাত্মক দাবানলের ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছে।

ইউরোপের জলবায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থা কোপার্নিকাস জানিয়েছে, চলতি বছরের মার্চ মাস ছিল ইউরোপের ইতিহাসে রেকর্ড করা সবচেয়ে উষ্ণতম মার্চ। এই মাসের গড় তাপমাত্রা ১৯৯১-২০২০ সালের স্বাভাবিক গড় তাপমাত্রার চেয়ে ২.৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল, যা চলমান এই তাপপ্রবাহের ভয়াবহতার ইঙ্গিত দেয়।