আলোচনার দায় কিয়েভের, দাবি মস্কোর; একে ‘কূটচাল’ বলল ইউক্রেন

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি শান্তি আলোচনার অগ্রগতি কিয়েভ এবং ওয়াশিংটনের প্রচেষ্টার ওপর নির্ভর করছে বলে মন্তব্য করেছে ক্রেমলিন। তবে ক্রেমলিনের এই বক্তব্যকে ‘দায় এড়ানোর অপকৌশল’ এবং ‘বিকৃত বয়ান’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে এর তীব্র সমালোচনা করেছে ইউক্রেন। দুই পক্ষের এই পাল্টাপাল্টি দোষারোপের ফলে শান্তি আলোচনার ভবিষ্যৎ আবারও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের পতাকা

রবিবার বেলারুশ ১ টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘আলোচনার সাফল্য মূলত কিয়েভ সরকারের অবস্থানের ওপর নির্ভর করছে। একইসঙ্গে ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা কতটা কার্যকর হবে, তার ওপরেও অনেক কিছু নির্ভরশীল।’

রাশিয়ার অবস্থান ‘সবার জানা’ উল্লেখ করে পেসকভ আরও বলেন যে, মাঠের বাস্তব পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করা যাবে না এবং অবশ্যই তা বিবেচনায় রাখতে হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই তৃতীয় দফার আলোচনার তারিখ নির্ধারিত হবে।

এর আগে গত সপ্তাহে পেসকভ জানিয়েছিলেন, ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনায় সম্মত হওয়া যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরেই তৃতীয় দফার আলোচনার তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ২ জুন তুরস্কের শহর ইস্তাম্বুলে রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনার দ্বিতীয় দফা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এর আগে প্রথম দফার আলোচনা হয় ১৬ মে। সর্বশেষ আলোচনায় উভয় পক্ষ অতিরিক্ত যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের পাশাপাশি নিজ নিজ পক্ষের ৬,০০০ সৈন্যের মৃতদেহ ফেরত দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছিল। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই সংঘাত নিরসনে দুই পক্ষই নিজেদের শান্তি প্রস্তাব জমা দেয়। এরপর একাধিকবার বন্দী বিনিময় সম্পন্ন হয়েছে, যার সর্বশেষটি ছিল গত ২৬ জুন।

এদিকে, সোমবার ক্রেমলিনের মুখপাত্রের বক্তব্যের কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের প্রধান আন্দ্রি ইয়ারমাক। তিনি পেসকভের মন্তব্যকে সংঘাত দীর্ঘায়িত করার দায়ভার অন্যের ওপর চাপানোর একটি অপপ্রয়াস বলে অভিহিত করেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক বার্তায় ইয়ারমাক বলেন, ‘রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ‘আলোচনার গতি কিয়েভের ওপর নির্ভরশীল’— এটি তাদের আরেকটি কূটচাল ছাড়া কিছু নয়। এমন কথা এমন সময়ে বলা হচ্ছে, যখন ইউক্রেনের শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংসের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, রাশিয়া শান্তির জন্য প্রস্তুত নয় এবং তারা তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রতিদিন এটি প্রমাণ করছে। মস্কো বিশ্বজুড়ে একটি "বিকৃত বয়ান" চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

ইয়ারমাক বলেন, ‘সত্যিটা খুব সাধারণ: মস্কোই এই যুদ্ধ শুরু করেছে এবং তা চালিয়ে যাচ্ছে। ক্রেমলিনই সমস্ত শান্তি উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করছে। অন্যদিকে, ইউক্রেন সব সময় যুদ্ধবিরতি এবং ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত শর্তে শান্তির পক্ষে কথা বলে আসছে।’