গাজায় প্রতি পাঁচজনে একজন বিপর্যয়কর ক্ষুধায়, উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ

গাজায় চলমান ভয়াবহ মানবিক সংকট মোকাবিলায় ইসরায়েলকে অবিলম্বে সব প্রবেশপথ খুলে দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। সোমবার এক দৈনন্দিন সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এই আহ্বান জানান। তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করেন।

ছবি - সংগৃহীত

স্টিফেন ডুজারিক বলেন, ‘বেসামরিক নাগরিকদের অবশ্যই সম্মান করতে হবে এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি মানবিক নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গাজায় পূর্ণাঙ্গ, নিরাপদ ও টেকসই ত্রাণ প্রবেশাধিকারের ওপর জোর দেন।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় চরম সীমাবদ্ধতার কারণে গাজার প্রতি পাঁচজন মানুষের মধ্যে একজন ‘বিপর্যয়কর মাত্রার ক্ষুধায়’ ভুগছে। ডুজারিক যোগ করেন, ‘মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে, অথচ এই অঞ্চলের মানুষের জন্য টন টন খাবার প্রস্তুত রাখা আছে। যদি প্রবেশাধিকার বাড়ানো হয়, তবেই এই খাবার তাদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব।’

জাতিসংঘের মুখপাত্র আরও জানান, মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উত্তর গাজায় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের জারি করা নতুন স্থানান্তর আদেশে 'উদ্বেগ' প্রকাশ করেছেন। এই আদেশের ফলে আরও কয়েক হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ডুজারিক বলেন, ‘মানুষকে এমন জনাকীর্ণ এলাকায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে যেখানে আগে থেকেই হাজার হাজার মানুষ অবস্থান করছে। এসব স্থানে পর্যাপ্ত আশ্রয়, পানি এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব রয়েছে, চিকিৎসা সুবিধার কথা তো বলাই বাহুল্য।’

জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা সংকটকে ঘনীভূত করছে

স্টিফেন ডুজারিক ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে হাসপাতাল, পানি শোধনাগার, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং টেলিযোগাযোগের মতো জীবনরক্ষাকারী কার্যক্রম চালু রাখতে গাজায় জ্বালানি প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন।

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যদি জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকে, তবে এই গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলোর বেশিরভাগই শিগগিরই বন্ধ হয়ে যাবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা খুব দ্রুতই ঘটবে।’ তিনি আরও বলেন, এই জ্বালানি দিয়েই গণ-রান্নাঘরগুলো চলে, যা গাজার বিশাল জনগোষ্ঠীর খাবার সরবরাহে অপরিহার্য। পাশাপাশি মালামাল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবহনের জন্যও জ্বালানি প্রয়োজন।

মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ইসরায়েলি হামলায় বেসামরিক নাগরিকদের ক্রমাগত প্রাণহানির ঘটনায় ‘নিন্দা’ জানিয়েছেন এবং একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য চলমান মধ্যস্থতার প্রচেষ্টাকে "স্বাগত" জানিয়েছেন বলে জানান ডুজারিক ।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক আহ্বান সত্ত্বেও ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি প্রাণঘাতী হামলায় ৫৬,৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এ ছাড়া, উপত্যকায় চালানো যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) গণহত্যার মামলার মুখোমুখি হয়েছে।