ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করল স্পেনের শীর্ষ ইস্পাত নির্মাতা

ইসরায়েলের সঙ্গে সকল প্রকার বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে স্পেনের অন্যতম বৃহৎ ইস্পাত নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিডেনর। গাজায় চলমান আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির মধ্যেই স্পেনের এই গুরুত্বপূর্ণ শিল্প প্রতিষ্ঠানটি এমন সিদ্ধান্ত নিলো। মঙ্গলবার স্পেনের স্থানীয় গণমাধ্যম ‘কাডেনা সের’ এই সংবাদটি নিশ্চিত করেছে।

স্পেন ও ইসরায়েলের পতাকা

এর আগে গত মাসে আয়ারল্যান্ডের গণমাধ্যম ‘দ্য ডিচ’ এক প্রতিবেদনে জানায় যে, সিডেনর গত বছরের আগস্ট থেকে শুরু করে দশ মাসে ইসরায়েলের অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘আইএমআই সিস্টেমস’-এর কাছে ১,২০৭ টন ইস্পাতের বার রপ্তানি করেছিল। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই সিডেনরের ওপর তীব্র সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি হয়।

বাস্ক-অঞ্চল ভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ বিশেষায়িত ইস্পাত নির্মাতা হিসেবে পরিচিত। বাণিজ্য বন্ধের ঘোষণা দিয়ে সিডেনর জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্তের ফলে তাদের ব্যবসায়িক ক্ষতি অত্যন্ত সামান্য। ইসরায়েলের বাজার থেকে তাদের মোট বিক্রির মাত্র ০.৫ শতাংশেরও কম আসতো। প্রতিষ্ঠানটি আরও উল্লেখ করে যে, তাদের এই পদক্ষেপ স্প্যানিশ সরকারের ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য সীমিত করার আহ্বানের সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ।

এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন স্পেনের মন্ত্রী পাবলো বুস্তিন্দুই। তিনি ব্লুস্কাই নামক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে বলেন, ‘সিডেনর অবশেষে সামাজিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছে।’ তিনি আরও জানান যে, স্পেনের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর প্রধানের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে পাঠানো একটি অনুরোধের উত্তর এখনো অমীমাংসিত। সেই অনুরোধে ‘ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর দখলদারিত্ব, বর্ণবৈষম্য এবং গণহত্যা চালানোয় অভিযুক্তদের সঙ্গে স্প্যানিশ কোম্পানিগুলোর সকল সম্পর্ক ছিন্ন করার’ আহ্বান জানানো হয়েছিল।

উল্লেখ্য, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই স্পেন সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে সকল প্রকার অস্ত্র বাণিজ্য স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। যদিও কিছু প্রতিবেদন বলছে, পূর্বের কয়েকটি চুক্তি এখনো সক্রিয় রয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৩৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্পেন ইউরোপের মধ্যে ইসরায়েলের অন্যতম সোচ্চার সমালোচক হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। গত বছর স্পেন ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতিও দিয়েছে।

গত সপ্তাহে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ভূমিকার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, মানবাধিকার বিষয়ক ধারাগুলোর ‘প্রকাশ্য লঙ্ঘনের’ পরেও ইইউ ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা অত্যন্ত হতাশাজনক।