৯ বছরে ১৪৭ হাতির মৃত্যু: আবাসস্থল সংকট ও মানুষের সঙ্গে সংঘাতই মূল কারণ
- Details
- by ২৪ ডেস্ক
বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে হাতি ও মানুষের সংঘাত। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত নয় বছরে নানা কারণে দেশে ১৪৭টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ১১৪টি এবং উত্তরাঞ্চলে ৩২টি হাতি মারা যায়। মূলত আবাসস্থল সংকট এবং মানুষের সঙ্গে সংঘাতই এই বিপুল সংখ্যক হাতির মৃত্যুর প্রধান কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ছবি - সংগৃহীত
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবশেষ চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকায় মাটিচাপা দেওয়া হাতির মরদেহ উদ্ধার করে বন বিভাগ, যা এই সংঘাতের ভয়াবহতাকে আবারও সামনে এনেছে। অথচ একসময় এই হাতিই ছিল গ্রামের মানুষের কাছে পরম বিস্ময় আর আনন্দের বিষয়।
বিশিষ্ট বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম তার এক অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ১৯৯২ সালে ইন্দোনেশিয়ার বোগোরে একটি সম্মেলনে যোগ দিতে গেলে সেখানকার ভিসা কর্মকর্তা অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, “বাংলাদেশে কি হাতি আছে?” তিনি এর উত্তরে বলেছিলেন, “সীমিত জায়গায় কীভাবে বন্যপ্রাণীর সঙ্গে মিলেমিশে থাকা যায়, তার জন্য আমরা নিরন্তর চেষ্টা করে চলেছি।”
ড. আনোয়ারুল ইসলামের মতে, সাধারণ মানুষের মধ্যে বন্যপ্রাণী নিয়ে বিপুল উৎসাহ রয়েছে। শেরপুরের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বহু বছর পর ভারতের মেঘালয় থেকে যখন একদল হাতি তাদের পূর্বপুরুষের ভিটামাটিতে ফিরে আসে, তখন স্থানীয়রা ঢাকা ও অন্য জায়গা থেকে স্বজনদের দাওয়াত করে সেই হাতি দেখতে এনেছিল। কিন্তু হাতিরা স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করলে সেই উৎসাহ ধীরে ধীরে সংঘাতে রূপ নেয়।
তবে এর বিপরীত চিত্রও দেখা গেছে। ২০০৪ সালে ভারতের ঝাড়খণ্ড থেকে দুটি হাতি মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে পদ্মা নদী পেরিয়ে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত চলে আসে। আট দিনে আটটি জেলা ভ্রমণকালে স্থানীয় মানুষ হাতি দুটিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়। অনেকে বালতিতে করে পানি এনে তাদের খেতে দেয়। সে সময় গোপালগঞ্জে একটি বাড়ির সব কাঁঠাল খেয়ে ফেলার পর বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ নারীকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তার কষ্ট হচ্ছে কি না, তিনি উত্তরে বলেছিলেন, “না, আমি খুব খুশি যে আমার বাড়িতে একটি হাতি এসেছে!”
এই ঘটনাটি মানুষ ও হাতির সহাবস্থানের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সে সময় বাংলাদেশ বন বিভাগ, পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় হাতি দুটিকে নিরাপদে ভারতে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়েছিল। এই ঘটনা দুই দেশের মধ্যে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সহযোগিতার এক নতুন দ্বার উন্মোচন করে। ভারতের তৎকালীন ডেপুটি হাইকমিশনার ডিলিপ সিনহা এক চিঠিতে এই সফল অভিযানের জন্য ড. আনোয়ারুল ইসলামের ভূমিকার বিশেষভাবে প্রশংসা করেন।
হাতি সংরক্ষণ একটি আন্তঃসীমান্তীয় বিষয় এবং এর সমাধানে সকল অংশীজনকে সম্পৃক্ত করা অপরিহার্য। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনার অভাবে তা সম্ভব হয় না। যেমন, ১৯৮৬ সালে হাতি সংরক্ষণের জন্য চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করার সময় স্থানীয় জনগণের মতামত নেওয়া হয়নি। ফলে তাদের মধ্যে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয় যে, বন থাকলে হাতি লোকালয়ের কাছাকাছি চলে আসবে। অল্প সময়ের মধ্যেই এই অভয়ারণ্যের প্রায় সব গাছ হারিয়ে যায় এবং হাতি-মানুষের সংঘাত তীব্রতর হয়।
তবে আশার কথা হলো, বর্তমানে চুনতি অভয়ারণ্যে বন বিভাগের লাগানো গাছ বড় হচ্ছে এবং রেললাইনের ওপর দিয়ে নির্মিত ‘ওভারপাস’ ব্যবহার করে হাতি চলাচল করছে। চুনতিকে ‘মাইক’ (হাতির অবৈধ হত্যা পর্যবেক্ষণ) কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হাতি সংরক্ষণে বাংলাদেশের অঙ্গীকারের প্রতিফলন।
আইইউসিএন বাংলাদেশের ২০১৬ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশে ‘আবাসিক’ হাতির সংখ্যা ২৬৮ এবং ‘পরিযায়ী’ হাতির সংখ্যা ৯৩। অন্যদিকে, ২০০১ সালের এক সমীক্ষায় দেশে পালিত হাতির সংখ্যা ৯৬টি বলে উল্লেখ করা হয়। আশার বিষয়, বাংলাদেশ বন বিভাগ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় দেশে হাতি গণনা এবং তাদের আবাসস্থলের বর্তমান অবস্থা মূল্যায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হাতি-মানুষের সংঘাত নিরসনে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করার বিকল্প নেই। হাতির বিচরণ এলাকার কাছাকাছি বসবাসকারী মানুষের কাছে হাতির সঙ্গে সহাবস্থানের জ্ঞান রয়েছে। বন কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনগণ আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য একটি পথ বের করলে এবং হাতি সংরক্ষণে মানুষকে সম্পৃক্ত করে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে পারলেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
ইউএনবি অবলম্বনে
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.