রাজস্ব বোর্ডে সমঝোতার পর আতঙ্ক, চলছে বরখাস্ত-তদন্তের খড়্গ
- Details
- by ২৪ ডেস্ক
দেড় মাসব্যাপী আন্দোলনের পর সমঝোতার ভিত্তিতে কর্মবিরতি প্রত্যাহার হলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) কাটছে না আতঙ্ক। ‘কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না’—ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যস্থতায় সরকারের পক্ষ থেকে এমন আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই। আন্দোলন প্রত্যাহারের পরপরই শুরু হয়েছে বাধ্যতামূলক অবসর, সাময়িক বরখাস্ত, বদলি এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত। এই পরিস্থিতিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও শঙ্কা বিরাজ করছে। অনেকে ভয়ে নিজেদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাতা নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লোগো
গত রোববার আন্দোলন প্রত্যাহারের পর অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্ভয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আহ্বানে ভরসা রাখতে পারছেন না রাজস্ব কর্মকর্তারা। গত পাঁচ দিনে এনবিআরের দুজন সদস্যসহ মোট ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। তাদের অধিকাংশই চলমান সংস্কার বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন।
সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. কামারুজ্জামান এবং ঢাকা পূর্ব কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার কাজী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনসহ পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের ঘোষণা দিয়েছে দুদক। অন্য তিনজন হলেন—আয়কর বিভাগের অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা, উপ-কর কমিশনার মো. মামুন মিয়া ও কর পরিদর্শক লোকমান আহমেদ।
এর আগে আন্দোলন প্রত্যাহারের পর এ পর্যন্ত এনবিআরের তিনজন সদস্য ও একজন কমিশনারকে ‘জনস্বার্থে’ বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন—সদস্য আলমগীর হোসেন, হোসেন আহমদ, আবদুর রউফ এবং কমিশনার মো. শব্বির আহমেদ। এছাড়া, দাপ্তরিক কাজ বন্ধ রাখার অভিযোগে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার জাকির হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
রাজস্ব খাতে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে প্রায় দেড় মাস ধরে আন্দোলন করছিল ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’। এর চূড়ান্ত ধাপে গত শনি ও রোববার সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করা হলে দেশের রাজস্ব আদায় কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। অচলাবস্থা নিরসনে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা সরকার ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আন্দোলন প্রত্যাহার করা হলে কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলে অর্থ উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছিলেন। সেই আশ্বাসের ভিত্তিতেই যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
কিন্তু এখন গণহারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারী কর্মকর্তারা। তারা মধ্যস্থতাকারী ব্যবসায়ী নেতাদের কাছে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানাচ্ছেন এবং এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধে ভূমিকা রাখার অনুরোধ করছেন।
এ বিষয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “অর্থ উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে আন্দোলন প্রত্যাহারের পর কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। কিন্তু এখন আমরা দেখছি, কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান করছে, অনেককে অবসরে পাঠানো হচ্ছে। ভয়ভীতিমুক্ত পরিবেশ না থাকলে কর্মকর্তারা কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন না।”
এদিকে, এনবিআরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো ও বদলির জন্য একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে আন্দোলনে যুক্তদেরই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এ পরিস্থিতিকে সরকারের জন্য ‘উভয় সংকট’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে ব্যবস্থা না নিলে একটি ভুল দৃষ্টান্ত তৈরি হতো। আবার সমঝোতার পর এত দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে কিছুটা সময় নেওয়া যেত। তাহলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তা এড়ানো সম্ভব ছিল।”
এসব বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। বদলি বা অবসর সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত, এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। দিন শেষে সবাইকে রাষ্ট্রের স্বার্থ চিন্তা করতে হবে।”
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.