প্রিপেইড কার্ড ব্যবহারে অভাবনীয় উত্থান, ১২৮৩ শতাংশ ‘বিস্ফোরণ’

দেশের আর্থিক খাতে এক প্রকারের বিপ্লব ঘটিয়েছে প্রিপেইড কার্ড। গত পাঁচ বছরে এর ব্যবহার বেড়েছে ১,২৮৩ শতাংশ, যা ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের প্রবৃদ্ধিকে বহুগুণে ছাড়িয়ে গেছে। শিক্ষার্থী, অনলাইন উদ্যোক্তা এবং যারা সহজে ক্রেডিট কার্ড পান না, তাদের কাছে সহজলভ্য ও নিরাপদ বিকল্প হিসেবে এই কার্ডের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ উপাত্তে এই অভাবনীয় উত্থানের চিত্র উঠে এসেছে।

ছবি - সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের মে মাসে যেখানে প্রিপেইড কার্ডের সংখ্যা ছিল মাত্র সাড়ে পাঁচ লক্ষ, ২০২৫ সালের এপ্রিলে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬ লক্ষে। এই বিশাল উল্লম্ফন দেশের ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তুলনামূলকভাবে, একই সময়ে ডেবিট কার্ডের ব্যবহারকারী বেড়েছে ১১৩ শতাংশ এবং ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারকারী বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে, প্রিপেইড কার্ড দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় নীরবে একটি বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।

কেন এই বিপুল জনপ্রিয়তা?

বিশ্লেষকদের মতে, প্রিপেইড কার্ডের এই জনপ্রিয়তার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, এটি ক্রেডিট কার্ডের মতো ঋণনির্ভর নয়। ব্যবহারকারী ঠিক যত টাকা ভরবেন, তত টাকাই খরচ করতে পারেন, ফলে ঋণের বোঝা বা অতিরিক্ত খরচের ঝুঁকি থাকে না। দ্বিতীয়ত, ব্যাংক হিসাব ছাড়াই এই কার্ড ব্যবহার করা যায়, যা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বাইরে থাকা বিশাল এক জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল লেনদেনের আওতায় এনেছে।

সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে আন্তর্জাতিক লেনদেন। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন ফি, ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ফি, অনলাইন কোর্স এবং আন্তর্জাতিক কেনাকাটার জন্য প্রিপেইড কার্ড একটি অপরিহার্য মাধ্যম হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের এপ্রিলে বিদেশে প্রিপেইড কার্ডের মাধ্যমে মোট ৮৪৫ মিলিয়ন টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৪.৬৮ শতাংশই খরচ হয়েছে ‘সরকারি সেবা’ খাতে, যা মূলত ভিসা বা প্রাতিষ্ঠানিক ফি পরিশোধের ইঙ্গিত দেয়। এরপরই রয়েছে ব্যবসায়িক সেবা (১৮.২৯%), যা অনলাইন বিজ্ঞাপন বা সফটওয়্যার কেনার মতো কাজে ব্যবহৃত হয়।

তরুণ ও পেশাজীবীদের প্রথম পছন্দ

ফ্রিল্যান্সার ও অনলাইন উদ্যোক্তাদের জন্য আন্তর্জাতিক লেনদেনের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হলো প্রিপেইড কার্ড। একইভাবে, উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের কাছেও এটি প্রথম পছন্দ। তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশিরা তাদের প্রিপেইড কার্ড সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন যুক্তরাজ্যে (২২ শতাংশ), যা উচ্চশিক্ষার অন্যতম জনপ্রিয় একটি গন্তব্য।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘নগদবিহীন ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রসারে আমাদের উদ্যোগ সফল হচ্ছে। বিশেষ করে প্রিপেইড কার্ডের এই বৃদ্ধি প্রমাণ করে যে, দেশের মানুষ ডিজিটাল লেনদেনে আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। এটি ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির একটি অত্যন্ত ইতিবাচক প্রবণতা।’