রাশিয়ার স্বীকৃতিকে স্বাগত জানাল আফগানিস্তান

অবশেষে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিলো রাশিয়া। মস্কোয় আফগান দূতাবাসে ইসলামিক আমিরাতের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে এই স্বীকৃতি কার্যকর হয়। ২০২১ সালে তালেবান দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা দখলের প্রায় চার বছর পর এই প্রথম কোনো দেশ তাদের সরকারকে বৈধতা দিলো। আফগান সরকার এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে অন্য দেশগুলোকেও রাশিয়াকে অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছে।

রাশিয়া ও আফগানিস্তানের পতাকা

ক্রেমলিন জানিয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কাবুলে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি ঝিরনভ বলেন, “আফগানিস্তানের সঙ্গে পূর্ণ অংশীদারিত্বে আমাদের আন্তরিক আগ্রহই এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ। ১০০ বছর আগেও রাশিয়াই প্রথম দেশ হিসেবে আফগানিস্তানের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এটি আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কেরই প্রতিফলন।”

রাশিয়ার এই পদক্ষেপকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শক্তিশালী করার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে অভিহিত করেছেন তালেবানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি।

২০২১ সালে আফগানিস্তানে সাবেক সরকারের পতনের পরও যে কয়েকটি দেশ কাবুলে তাদের দূতাবাস চালু রেখেছিল, রাশিয়া তাদের মধ্যে অন্যতম। সম্প্রতি তালেবান নেতাদের নাম নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া এবং মস্কোতে তালেবানের প্রস্তাবিত রাষ্ট্রদূতকে গ্রহণ করার মতো পদক্ষেপও নিয়েছিল দেশটি। এর আগে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তালেবান কর্তৃপক্ষ রাশিয়া ও চীনকে তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে উল্লেখ করেছিল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোহাম্মদ আসলাম দানিশমাল এ বিষয়ে বলেন, “আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে হলে ইসলামিক আমিরাতকে আগে অভ্যন্তরীণ দায়িত্বগুলো পালন করতে হবে। রাশিয়া যেভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে, অন্য দেশগুলোরও সেই পথে এগিয়ে আসা উচিত।”

মানবাধিকার, বিশেষ করে নারী ও কন্যাশিশুদের অধিকার নিয়ে গভীর উদ্বেগের কারণে পশ্চিমা বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ এখনো তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া থেকে বিরত রয়েছে। এখন দেখার বিষয়, রাশিয়ার এই সিদ্ধান্ত তালেবানের জন্য বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি আদায়ের পথ খুলে দেয় কি না এবং অন্যান্য দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিক্রিয়া কী হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে তালেবান প্রথমবার আফগানিস্তানের ক্ষমতায় এলে ২০০১ সালে মার্কিন আগ্রাসনের মুখে তাদের পতন ঘটে। এর দুই দশক পর, ২০২১ সালে তারা পুনরায় ক্ষমতা দখল করে দেশকে ‘ইসলামিক আমিরাত’ হিসেবে ঘোষণা করে। দীর্ঘ সময় ধরে কোনো দেশ স্বীকৃতি না দেওয়ায় তারা এক প্রকার বিচ্ছিন্ন অবস্থাতেই ছিল। রাশিয়ার স্বীকৃতির মাধ্যমে সেই অচলাবস্থার অবসান হলো।