পেঁয়াজ নিয়ে আর হাহাকার নয়, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের মহাযজ্ঞ

পেঁয়াজ নিয়ে প্রতি বছরের অস্থিরতা ও উচ্চমূল্যের ভোগান্তি দূর করতে এবার আগেভাগেই মাঠে নেমেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশজুড়ে কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে ৫০ টন উন্নতমানের বীজ, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। বীজের সঙ্গে রয়েছে প্রয়োজনীয় ডিএপি ও এমওপি সারও। এই উদ্যোগের ফলে একদিকে যেমন উৎপাদন বাড়বে, তেমনই বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পেঁয়াজ

গত বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতাকে এবার সুযোগে পরিণত করা হয়েছে। সেবার প্রণোদনার বীজে চারা না গজানোর মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলেও, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের দূরদর্শী পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্র থেকে উন্নত বীজ এনে সংকট সামাল দেওয়া হয়, যা বাম্পার ফলনেও ভূমিকা রাখে। সেই সাফল্য থেকেই শিক্ষা নিয়ে চলতি বছর বীজ বিতরণ প্রক্রিয়া আরও নিখুঁত ও সময়োপযোগী করা হয়েছে, যাতে কৃষকদের কোনো ধরনের অনিশ্চয়তায় পড়তে না হয়।

শুধু বীজ দিয়েই দায়িত্ব শেষ নয়, পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে নেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ সমন্বিত পরিকল্পনা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম জানান, চাষের জমি বৃদ্ধি, আধুনিক পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণে সারাদেশে চার হাজার এয়ার-ফ্লো মেশিন স্থাপন, বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের জাত নিয়ে গবেষণা জোরদার করা হয়েছে। লক্ষ্য একটাই—উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত পেঁয়াজের একটি টেকসই সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

এরই মধ্যে দেশের ৩৭টি উপজেলায় বীজ বিতরণ শেষ হয়েছে এবং বাকি ১৩টি উপজেলাতেও দ্রুত পৌঁছে যাবে। তিনটি আমদানিকারক কোম্পানির মাধ্যমে আনা এসব বীজ কাস্টমস থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সরাসরি কৃষকের কাছে যাচ্ছে। ‘পার্টনার’ (প্রোগ্রাম অন অ্যাগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন অন্ট্রাপ্রেনারশিপ রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ) প্রকল্পের কর্মসূচি সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদের মতে, আগামী ১৫ জুলাই থেকে বীজতলা তৈরির কাজ শুরু হবে এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যেই নতুন ফসল বাজারে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ বৃদ্ধি পেলে কেবল অভ্যন্তরীণ চাহিদাই মিটবে না, বরং অসময়ে ফসল বাজারে আসায় কৃষকরাও ভালো দাম পাবেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হাফিজুল হক খান মনে করেন, এই উদ্যোগ সফল হলে দেশের পেঁয়াজ আমদানিনির্ভরতা কমবে এবং বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে, যা কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের জন্যই লাভজনক হবে।