অকল্পনীয় বিপর্যয়: কেউ ভাবেনি এমন ঘটবে, টেক্সাসের বন্যায় বাড়ছে প্রাণহানি

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ‘আমেরিকা দিবস’ বা জুলাইয়ের চতুর্থ দিবসের ছুটির দিনে ভয়াবহ আকস্মিক বন্যায় কয়েক ডজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু পর্যটক ও শিবিরার্থী নিখোঁজ রয়েছেন। সান আন্তোনিওর বাইরে গুয়াডালুপে নদীর তীরে এই বিপর্যয় ঘটেছে, যেখানে ক্যাম্প মিস্টিক নামের একটি খ্রিষ্টান গ্রীষ্মকালীন শিবিরে অংশ নেওয়া অনেক কিশোরীও নিখোঁজ রয়েছে। এই ঘটনার পর ব্যাপক অনুসন্ধান তৎপরতা শুরু হয়েছে এবং একইসঙ্গে কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি ও প্রাথমিক পদক্ষেপের গতি নিয়ে তীব্র প্রশ্ন উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যার পর উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। রোববার ইনগ্রামের গুয়াডালুপে নদীর তীরে তল্লাশি চালান কলেজ স্টেশন ফায়ার ডিপার্টমেন্টের উদ্ধারকর্মীরা। ছবি: এপি

শুক্রবার ভোরে টেক্সাসের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। এই অঞ্চলের শুষ্ক ও কঠিন মাটির কারণে বৃষ্টির পানি সহজে মাটিতে শোষিত না হয়ে দ্রুত গড়িয়ে যায়, যা একে প্রাকৃতিকভাবেই বন্যাপ্রবণ করে তুলেছে। ছুটির দীর্ঘ সপ্তাহান্তের মাঝামাঝি সময়ে, যখন অধিকাংশ মানুষ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, তখনই এই দুর্যোগ আঘাত হানে। একটি প্রচণ্ড শক্তিশালী ঝড়ের ফলে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় প্রায় ১২ ইঞ্চি (৩০ সেন্টিমিটার) বৃষ্টিপাত হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্যার পূর্বাভাস দেওয়ার পর, জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর ভোর ৪টার দিকে একটি জরুরি সতর্কবার্তা জারি করে, যেখানে জীবননাশের মারাত্মক ঝুঁকি ও ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনার কথা বলা হয়। কারভিল শহরের বাসিন্দাদের মতে, ভোর ৫টা ২০ মিনিটের মধ্যেই পানির উচ্চতা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে শুরু করে। পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির বিশাল স্রোত গুয়াডালুপে নদীতে প্রবেশ করলে মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যে নদীর পানি ২৬ ফুট (৮ মিটার) বেড়ে যায়।

রবিবার সকাল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র কার কাউন্টিতেই কমপক্ষে ৫৯ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া মধ্য টেক্সাসের অন্যান্য এলাকা থেকে আরও আটজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কার কাউন্টিতে নিহতদের মধ্যে ৩৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং ২১ জন শিশু। নিহত শিশুদের মধ্যে ১৬ জনই ক্যাম্প মিস্টিকের কিশোরী, যারা নদীর তীরে অবস্থিত ওই শিবিরে অংশ নিয়েছিল। শিবির থেকে আরও ১১ জন কিশোরী এখনও নিখোঁজ রয়েছে।

ক্যাম্প মিস্টিকের নিখোঁজ শিবিরার্থী ছাড়াও নিকটবর্তী অন্যান্য শিবির ও বিভিন্ন এলাকা থেকে ঠিক কতজন নিখোঁজ রয়েছেন, তার কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি। কারভিল শহরের ব্যবস্থাপক ডালটন রাইস শনিবার বলেন, ‘জুলাইয়ের চতুর্থ দিবসের ছুটির কারণে পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকায় আমরা এই মুহূর্তে নিখোঁজের সংখ্যা অনুমানও করতে চাই না।’

এদিকে, বন্যার ভয়াবহতা থেকে বেঁচে ফেরা মানুষেরা এটিকে ‘মৃত্যুর এক কালো দেয়াল’ বলে অভিহিত করেছেন এবং জানিয়েছেন যে তারা কোনো ধরনের জরুরি সতর্কবার্তা পাননি। এই ঘটনায় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।

কার কাউন্টির বিচারক রব কেলি, যিনি নিজেও গুয়াডালুপে নদীর তীরে বাস করেন, শনিবার বলেন, ‘কেউই ধারণা করতে পারেনি যে এমনটা ঘটবে।’ বিভিন্ন কর্মকর্তা এই বন্যাকে ‘শতবর্ষী বন্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যার অর্থ ঐতিহাসিক রেকর্ডের ভিত্তিতে এমন মাত্রার পানির উচ্চতা ছিল অত্যন্ত অভাবনীয়।

তবে সমালোচকরা বলছেন, কেন নদীর তীরবর্তী বাসিন্দা এবং শিবিরগুলোকে ভোর ৪টার আগে সতর্ক করা বা তাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়নি। জবাবে কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন যে, অনেক সময় বন্যার পূর্বাভাস সামান্য প্রমাণিত হলে জনসাধারণ বারবার সতর্কবার্তায় ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কার কাউন্টির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা টর্নেডো সতর্কীকরণ ব্যবস্থার মতো একটি শক্তিশালী বন্যা সতর্কীকরণ ব্যবস্থার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু এর খরচের কারণে জনসাধারণ তা প্রত্যাখ্যান করে। রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সতর্কতা ও উদ্ধারে বিলম্ব নিয়ে সাংবাদিকরা বারবার প্রশ্ন করলে কর্মকর্তারা কোনো উত্তর না দিয়েই সেখান থেকে চলে যান।

এই আকস্মিক বন্যায় বহু শিবির নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এবং ঘরবাড়ি ভিত্তি থেকে উপড়ে গেছে। হেলিকপ্টারে করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করার পর বিচারক রব কেলি বলেন, ‘এটি পরিষ্কার করতে এবং পুনর্নির্মাণ করতে অনেক দীর্ঘ সময় লাগবে।’