ফয়েজ আহমদ: ৭০ শতাংশ ইন্টারনেট ভারতের ওপর নির্ভরশীল ছিল

কিছুদিন আগেও দেশের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারের ৭০ শতাংশই ছিল প্রতিবেশী দেশ ভারতের ওপর নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতা এবং বিদেশ থেকে অবৈধভাবে ব্যান্ডউইথ আনার কারণেই দেশে ইন্টারনেটের মান বাড়েনি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

সোমবার (৭ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশের ইন্টারনেট সেবা এখনও নিম্নমানের এবং এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো বহিরাগত নির্ভরতা।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “অনেক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে অবৈধভাবে ব্যান্ডউইথ আনত।” এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা দেশের সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ইন্টারনেট সংযোগ বাধ্যতামূলক করেছি।” এর মাধ্যমে একদিকে যেমন নির্ভরতা কমবে, তেমনি দেশের নিজস্ব সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হবে।

ইন্টারনেটের মানোন্নয়নে সরকারের অন্যান্য পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সাথে একটি ‘মূল কার্যকারিতা সূচক’ (কেপিআই) ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে আলোচনা চলছে। এই ব্যবস্থা চালু হলে যেসব প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের পরিষেবা দেবে, তাদের জরিমানার আওতায় আনা হবে।

একই সঙ্গে সরকার ব্রডব্যান্ডের সর্বনিম্ন গতি ৫ এমবিপিএস থেকে বাড়িয়ে ১২-১৫ এমবিপিএস করার জন্য ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আহ্বান জানিয়েছে। তিনি বলেন, “পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে, ৫ এমবিপিএসকে আর ব্রডব্যান্ড বলা যায় না।”

ফয়েজ আহমদ দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের দুরবস্থার মূল কারণ হিসেবে পূর্ববর্তী সরকারগুলোর দুর্নীতিকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, “এই খাতে দীর্ঘদিন ধরে ‘স্বৈরাচার ও মাফিয়াদের’ সিন্ডিকেট কাজ করছে, যারা শত শত কোটি টাকা লুট করেছে। এই সিন্ডিকেট ভাঙতেই সরকার নতুন টেলিযোগাযোগ নীতি প্রণয়ন করছে।”

তিনি আরও বলেন, পূর্ববর্তী প্রশাসনের অধীনে এই খাতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে, যা তদন্তের জন্য শ্বেতপত্র কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নতুন নীতিকে একটি সংস্কারমূলক পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, “আমরা কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় আসিনি, আমরা জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে এসেছি। এই নতুন নীতি দুর্নীতির শৃঙ্খল ভেঙে একটি ন্যায্য, দক্ষ ও ভবিষ্যৎ-প্রস্তুত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পদক্ষেপ।”