চীনের সঙ্গে বিচ্ছেদ নয়, নতুন পথে হাঁটতে চায় ইউরোপ

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন মঙ্গলবার বলেছেন, চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নীতি হবে ‘ঝুঁকি নিরসন’, ‘সম্পর্ক বিচ্ছেদ’ নয়। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ইইউ-চীন সম্পর্ক নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এই মন্তব্য করেন।

উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, “আমরা আমাদের অর্থনীতিকে ঝুঁকি মুক্ত করব, কিন্তু আমরা সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাই না।” তিনি চীনের সঙ্গে আরও ‘ভারসাম্যপূর্ণ’ ও ‘স্থিতিশীল’ সম্পর্ক গড়তে জোটের ‘প্রস্তুতির’ কথা জানান।

চীনের একটি ‘কৃষিভিত্তিক সমাজ’ থেকে ‘শিল্প দানব ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির নেতা’ হিসেবে উত্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি এই নতুন বাস্তবতাকে ‘নির্মোহভাবে’ মূল্যায়নের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, চীনের ‘সম্পূর্ণ ভিন্ন শাসনব্যবব্যবস্থা’ এবং তার হাতে থাকা ‘অনন্য সব কৌশল’ দেশটিকে ‘নিয়মের বাইরে খেলার’ সুযোগ করে দেয়, যা ইউরোপের জন্য ‘কৌশলগত’ ও ‘পদ্ধতিগত’ ঝুঁকি তৈরি করে।

উরসুলা ভন ডার লিয়েন ব্যাখ্যা করে বলেন, “উদাহরণস্বরূপ, এটি চীনকে ভর্তুকি দেওয়া অতিরিক্ত পণ্য দিয়ে বিশ্ববাজার ভাসিয়ে দেওয়ার সুযোগ করে দেয়, যা কেবল তাদের নিজস্ব শিল্পকে উৎসাহিত করে না, বরং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাকে রুদ্ধ করে দেয়।”

চীনকে বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তি ও সাইবার জগতের এক ‘অপ্রতিরোধ্য শক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বৈশ্বিক বিষয়ে চীনের সব মতকে ‘স্বাগত’ জানালেও, ইউরোপে যেকোনো ধরনের ‘প্রভাব বিস্তারের কার্যক্রম’ এবং ‘সাইবার আক্রমণের’ বিরুদ্ধে ‘সতর্ক’ থাকার অঙ্গীকার করেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে তিনি ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলেও অভিহিত করেন।

তিনি আরও বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, চীনের সঙ্গে আরও অর্থবহ অংশীদারিত্ব গড়ার সুযোগ এখনো আছে। কিন্তু আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে হলে, যেসব বিষয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থায় আছি, সেখানে অবশ্যই বাস্তব অগ্রগতি এবং ন্যায্য সমাধান খুঁজে বের করতে হবে: যার মূল ভিত্তি হবে নির্ভরযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা।”

পারস্পরিক স্বার্থে তিনটি অগ্রাধিকারের ওপর তিনি জোর দেন: অর্থনৈতিক সম্পর্কের ‘ভারসাম্য পুনঃস্থাপন’, ‘ঝুঁকি নিরসন’ এবং ‘বৈশ্বিক বিষয়গুলোতে কূটনীতি এগিয়ে নেওয়া’।

কমিশনের প্রেসিডেন্ট বলেন, “চীন যেভাবে ভবিষ্যতের অনেক প্রযুক্তিতে আগে থেকেই বিনিয়োগ করে বিশ্ববাজার ভাসিয়ে দিয়েছে এবং প্রতিযোগীদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইউরোপের স্বাধীনতার জন্যই ঝুঁকি নিরসন জরুরি।”

তিনি যোগ করেন, “আমরা বেইজিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করছি যাতে তারা তাদের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে। কারণ, আমি শুরুতেই বলেছি, আমরা কৌশলগত সম্পর্ক বিচ্ছেদে বিশ্বাস করি না এবং এটি আমাদের স্বার্থের অনুকূল নয়। আমি মনে করি, ইউরোপের জন্য এটি অদক্ষ ও অকার্যকর একটি পদক্ষেপ হবে।”

ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে চীনের কথিত সমর্থনের বিষয়ে তিনি বলেন, চীন যে ‘কার্যত রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থনীতিকে সক্রিয় রাখছে’, তা তারা মেনে নিতে পারেন না। তিনি সতর্ক করে বলেন, এই সংঘাতে চীনের ভূমিকা ভবিষ্যতে ইইউ-চীন সম্পর্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি ‘প্রধান নিয়ামক’ হবে।

তিনি উপসংহারে বলেন, “চীন যদি নির্ভরযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত থাকে, তবে আমরা একত্রে অনেক কিছু করতে পারি।”