টানা ভারী বৃষ্টিতে কক্সবাজারে ৮০টিরও বেশি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি

কক্সবাজারে গত এক সপ্তাহ ধরে টানা ভারী বর্ষণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় জেলায় ৮০টিরও বেশি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে জেলার টেকনাফ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, জুলাই মাসের প্রথম সাত দিনেই ৬৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ এবি হান্নান বলেন, এই পরিমাণ বৃষ্টি ‘ভারী বর্ষণ’ হিসেবে বিবেচিত হয়। সাধারণত জুলাই মাসে গড় বৃষ্টিপাত প্রায় ৯৯ মিমি প্রতিদিন।

তিনি আরও বলেন, গত বছর জুলাই মাসে কক্সবাজারে এক হাজার ৭০৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। এবারের প্রবল বর্ষণে সেই রেকর্ড ভাঙতে পারে।

এদিকে টেকনাফ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নেই জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তথ্য অনুযায়ী, এখানে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

হ্নীলা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী বলেন, “আমাদের ১২টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। চার হাজারের বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, “মহেশখালিয়াপাড়া, নতুন পল্লানপাড়া, তুলাতুলি, লেংগুরবিল, খোংকারপাড়া, মথপাড়া ও রাজারছড়া এই সাতটি গ্রাম সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়েছে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহেসান উদ্দিন বলেন, “আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।”

সেন্ট মার্টিন দ্বীপেও প্রবল জলোচ্ছ্বাসের কারণে অনেক গ্রামে সমুদ্রের পানি ঢুকে পড়েছে। টানা বৃষ্টি ও খারাপ ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে উঠেছে।

উখিয়া উপজেলায় পাহাড়ি ঢলের কারণে প্রায় ১৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

উখিয়া উপজেলায় ইউএনও কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, “নিরবচ্ছিন্ন বৃষ্টিতে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যদি ৫-৬ ঘণ্টা বৃষ্টি বন্ধ থাকে, তবে পানি নেমে যেতে পারে। তবে ইতোমধ্যেই অনেক সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতেও পানি ঢুকে গেছে। ক্যাম্প ৩, ৭, ১২ ও ২২–এ প্রায় ১৫ হাজার শরণার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এনজিওগুলো সেখানে উদ্ধার ও সহায়তার কাজ করছে।

রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল, রাজারকুল, শ্রীকুল, বাংলাবাজার ও ঝিলংজার খুরুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বকখালী নদীর পানি ঢুকে পড়ায় ১০ থেকে ১২টি গ্রামের অন্তত এক হাজার ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে।

মাতামুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছেছে। চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় দুই হাজারের বেশি ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, “বকখালী ও মাতামুহুরী নদীর পানি বাড়তে থাকায় তীরবর্তী অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিছু জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে, দ্রুত মেরামতের কাজ চলছে।”