ইইউ: গাজায় সহায়তা বাড়াতে রাজি ইসরায়েল

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে ‘গঠনমূলক সংলাপের’ পর গাজা উপত্যকায় চলমান মানবিক সংকট নিরসনে ইসরায়েল জরুরি ভিত্তিতে একগুচ্ছ মানবিক পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছে। বৃহস্পতিবার জোটটির পররাষ্ট্রনীতি প্রধান এই ঘোষণা দেন।

এক বিবৃতিতে কাজা কালাস বলেন, “ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত এবং ইইউ ও ইসরায়েলের মধ্যে গঠনমূলক সংলাপের পর গাজা উপত্যকার মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়নে ইসরায়েল উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপে সম্মত হয়েছে।”

তিনি বলেন, “এই পদক্ষেপগুলো আগামী দিনগুলোতে বাস্তবায়িত হচ্ছে বা হবে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, উভয় পক্ষের মধ্যে একটি অভিন্ন বোঝাপড়া হয়েছে যে, “বড় পরিসরে ত্রাণ সরাসরি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে” এবং “ত্রাণ যেন হামাসের হাতে না যায়, তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া অব্যাহত থাকবে।”

সম্মত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে গাজায় খাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রীবাহী দৈনিক ট্রাকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি, ভূখণ্ডের উত্তর ও দক্ষিণে অতিরিক্ত পারাপার পথ খোলা এবং জর্ডান ও মিশরের মধ্য দিয়ে ত্রাণ পাঠানোর পথ পুনরায় চালু করা।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে ‘গাজা উপত্যকাজুড়ে রুটির দোকান ও গণ রান্নাঘরের মাধ্যমে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা’, ‘মানবিক স্থাপনাগুলোর ব্যবহারের জন্য জ্বালানি সরবরাহ পুনরায় চালু করে সেটিকে কার্যকর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া’ এবং একটি পানি লবণমুক্তকরণ প্রকল্পের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের মতো জরুরি অবকাঠামো পুনর্নির্মাণের কাজ সহজতর করা।

তিনি ত্রাণকর্মীদের সুরক্ষার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেন যে, “ত্রাণকর্মীদের সুরক্ষা” নিশ্চিত করাও গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “এই জরুরি পদক্ষেপগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে ইইউ মাঠ পর্যায়ে থাকা সকল প্রাসঙ্গিক মানবিক অংশীজন, জাতিসংঘের সংস্থা এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করতে প্রস্তুত রয়েছে।”

বিবৃতিতে বলা হয়, “ইইউ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, অবশিষ্ট সকল পণবন্দির মুক্তি এবং মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মিশর, কাতার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য পুনরায় আহ্বান জানাচ্ছে।”

বুধবার হামাস জানায়, গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ‘নমনীয়তার’ চিহ্ন হিসেবে তারা ১০ জন জীবন্ত পণবন্দিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে বলেছিলেন যে, তার প্রশাসন গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে “চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছেছে”। বর্তমানে কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা চলছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলায় প্রায় ৫৭,৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। নিরবচ্ছিন্ন এই বোমাবর্ষণে উপত্যকাটি বিধ্বস্ত হয়েছে এবং এর ফলে খাদ্য সংকট ও রোগের বিস্তার ঘটেছে।

গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, উপত্যকায় চালানো যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও গণহত্যার মামলার মুখোমুখি হয়েছে।