দখলদারিত্ব জোরদার করতে ইসরায়েলি মন্ত্রীর নতুন পুলিশ ইউনিট

দখলকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের নিয়ে নতুন একটি সশস্ত্র পুলিশ ইউনিট গঠন করেছেন ইসরায়েলের চরমপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির। পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অবৈধ দখলদারিত্ব আরও পাকাপোক্ত করার জন্যই এই বিতর্কিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বুধবার (৯ জুলাই) হেবরনের ঐতিহাসিক ইব্রাহিমি মসজিদের প্রাঙ্গণে এক অনুষ্ঠানে ‘ফার্স্ট রেসপন্স ইউনিট’ বা ‘তাৎক্ষণিক সাড়া প্রদানকারী দল’ নামের এই নতুন বাহিনীর ঘোষণা দেন বেন-গভির। ১০০ জনেরও বেশি অবৈধ বসতি স্থাপনকারীকে এই বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ ও উন্নত অস্ত্র দেওয়া হবে।

ইসরায়েলি পুলিশের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত ও কার্যকর সাড়া দেওয়া, বসতি স্থাপন করা এলাকাগুলোর নিরাপত্তা জোরদার এবং অপরাধ দমন করাই এই ইউনিটের প্রধান কাজ। পুলিশের দাবি, কৌশলগত চিন্তাভাবনার ফল হিসেবেই এই ইউনিট গঠন করা হয়েছে, যা যেকোনো ঘটনায় পেশাদার ও দক্ষ প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করবে।

তবে বেন-গভির নতুন এই ইউনিটের সদস্যদের ‘সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, তারা মাঠপর্যায়ে ‘দ্রুত প্রতিক্রিয়ার’ মাধ্যমে ভূমিকা রাখছেন। তিনি এই পদক্ষেপকে ‘বাস্তব সার্বভৌমত্ব এবং কার্যকর জায়নবাদ’-এর প্রতীক বলেও উল্লেখ করেন। তার এই বক্তব্যকে পশ্চিম তীর আনুষ্ঠানিকভাবে দখলের ইসরায়েলি পরিকল্পনারই ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। পুলিশ জানিয়েছে, নতুন ইউনিটের সদস্যদের যুদ্ধ প্রশিক্ষণ, বিশেষ পুলিশি ক্ষমতা এবং উন্নত অস্ত্রশস্ত্র দেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনার মাত্র এক সপ্তাহ আগে ইসরায়েলের ১৪ জন মন্ত্রী ও সংসদ নেসেটের স্পিকার আমির ওহানা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে অবিলম্বে পশ্চিম তীর দখলের জন্য চাপ দিয়েছিলেন। জাতিসংঘও একাধিকবার সতর্ক করে বলেছে, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এটি দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করছে। উল্লেখ্য, গত জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করে সেখান থেকে সমস্ত বসতি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল।

পুলিশের উপকমিশনার আভশালেম পেলেদের মতে, এই ইউনিট মূলত একটি ‘স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী’ হিসেবে কাজ করবে এবং বিদ্যমান পুলিশ বাহিনীর একটি ‘অতিরিক্ত স্তর’ হিসেবে পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের নিরাপত্তা দেবে।

তবে সমালোচকরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, বেন-গভির এ ধরনের ইউনিট গঠনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় পুলিশ কাঠামোর বাইরে একটি নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলছেন। তাদের মতে, ‘জাতীয় রক্ষী বাহিনী’ বা ‘ন্যাশনাল গার্ড’ নাম দিয়ে আদতে একটি মিলিশিয়া বাহিনী তৈরি করা হচ্ছে।