বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও পোশাক রপ্তানিতে ৮.৮৪% প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের

পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক বাজারে টিকে থাকতে হলে শুধু কম দামে পোশাক তৈরির প্রতিযোগিতায় সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। ক্রেতাদের বারবার বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে হলে নতুন বাজার, উদ্ভাবনী পণ্য এবং নিজস্ব কৌশলগত সুবিধা তৈরি করা এখন সময়ের অপরিহার্যতা। পোশাক শিল্পখাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নতুন বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই ভবিষ্যতের পথে এগোতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের এই পরামর্শ এমন এক সময়ে এসেছে, যখন খাতটি বৈশ্বিক নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও দারুণ সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) শিল্প বিশ্ববাজারে ৩৯.৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৮.৮৪ শতাংশ বেশি। এই প্রবৃদ্ধির পেছনে নিটওয়্যার খাতের ৯.৭৩ শতাংশ এবং ওভেন খাতের ৭.৮২ শতাংশ অবদান রেখেছে।

ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে শক্তিশালী অবস্থান

রপ্তানি আয়ের সিংহভাগই এসেছে বাংলাদেশের চিরাচরিত বা ট্র্যাডিশনাল বাজারগুলো থেকে। মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ৮৪ শতাংশই এসেছে এসব দেশ থেকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যেখানে মোট রপ্তানির অর্ধেকেরও বেশি (৫০.১০ শতাংশ) অর্থাৎ ১৯.৭১ বিলিয়ন ডলারের পোশাক গেছে। এই বাজারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯.১০ শতাংশ।

ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানি ৪.৯৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করে বাংলাদেশের শীর্ষ গন্তব্য হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। এরপরই রয়েছে স্পেন (৩.৪০ বিলিয়ন ডলার) এবং ফ্রান্স (২.১৬ বিলিয়ন ডলার)। তবে নেদারল্যান্ডস (২১.২১%) এবং সুইডেনের (১৬.৪১%) মতো দেশে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি ভবিষ্যতের জন্য নতুন আশা তৈরি করছে।

অন্যদিকে, একক দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার। দেশটিতে ৭.৫৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যেখানে প্রবৃদ্ধির হার ছিল চোখে পড়ার মতো—১৩.৭৯ শতাংশ। এছাড়া যুক্তরাজ্যে ৪.৩৫ বিলিয়ন ডলার এবং কানাডায় ১.৩০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে।

নতুন বাজারের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

চিরাচরিত বাজারের বাইরে নতুন বা নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারগুলোতেও বাংলাদেশের সম্ভাবনা বাড়ছে। এই বাজারগুলোতে রপ্তানি ৫.৬১ শতাংশ বেড়ে ৬.৪৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা মোট রপ্তানির প্রায় ১৬ শতাংশ। এর মধ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের মতো দেশগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে তুরস্কে ২৫.৬২ শতাংশ এবং ভারতে ১৭.৩৯ শতাংশের মতো অভাবনীয় প্রবৃদ্ধি এই বাজারের গুরুত্বকে স্পষ্ট করেছে।

তবে সব নতুন বাজারে চিত্রটা এক নয়। রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে, যা বাজার বৈচিত্র্যকরণের চ্যালেঞ্জগুলোকেও সামনে নিয়ে এসেছে।

ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের (আইটিসি) তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক পোশাক বাজারের মধ্যে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের বাজারই হলো এই নন-ট্র্যাডিশনাল দেশগুলো। বাংলাদেশ এই বিশাল বাজারের মাত্র ৬ শতাংশ অংশীদারিত্ব ধরে রেখেছে, যা প্রমাণ করে এখানে বিস্তারের সুযোগ অফুরন্ত। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলেই বাংলাদেশের পোশাক শিল্প তার টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারবে।