সিইসি: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জিং, তবে নির্বাচন আয়োজনে আত্মবিশ্বাসী

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে দুটি প্রশ্ন সবচেয়ে বড় হয়ে উঠেছে, তার সরাসরি উত্তর দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং ভঙ্গুর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যে ভোট আয়োজন সম্ভব কি না—এই দুই জটিল বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট করেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ, তবে তিনি একটি সফল নির্বাচন আয়োজনে আত্মবিশ্বাসী। একইসঙ্গে, আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে আইনি সীমাবদ্ধতার কথাও তুলে ধরেছেন তিনি।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি: চ্যালেঞ্জ ও আত্মবিশ্বাস

নির্বাচনকালীন পরিবেশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্বেগের বিষয়টি স্বীকার করে সিইসি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে একটি ‘চ্যালেঞ্জিং’ বিষয়। বিশেষ করে ‘মব ভায়োলেন্স’ বা দলবদ্ধ সহিংসতার মতো ঘটনাগুলো উদ্বেগের কারণ। তবে তিনি মনে করেন, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব।

তিনি আত্মবিশ্বাসের সুরে বলেন, ‘নির্বাচন যখন হবে, তখন দেখবেন সবকিছু শান্ত হয়ে গেছে। জনগণ যদি আপনার সঙ্গে থাকে, কোনো রকমের মব বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আপনাকে ক্ষতি করতে পারবে না।’

সিইসি আরও জানান, সরকার এবং নির্বাচন কমিশন—উভয়ই এই চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে সচেতন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং বিজিবি মোতায়েনের বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রস্তুতি চলছে। তাই তিনি মনে করেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।

আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে ইসির অবস্থান

দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারা না পারার বিষয়টি এখন আইনি প্রক্রিয়ায় আটকে আছে। এ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘সরকার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত উনাদের (আওয়ামী লীগের) সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। যেহেতু তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডই করতে পারবে না, সেহেতু তাদের রেজিস্ট্রেশন রাখাই তো মিনিংলেস হয়ে যায়। এ জন্য আমরাও তাদের রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করে দিয়েছি।’

এই সিদ্ধান্তের ফলে নির্বাচন কতটা অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সে প্রশ্ন তো উঠতেই পারে, স্বাভাবিক।’ তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, দলটির বিপুল সংখ্যক সমর্থক ভোটার হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন।

নির্বাচনের তারিখ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত

সাক্ষাৎকারে সিইসি জানান, জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কে তিনি নিজেও অবগত নন। সরকারের পক্ষ থেকে দিনক্ষণ চূড়ান্ত করার পর তফসিল ঘোষণার জন্য কমিশনের অন্তত দুই মাস সময় প্রয়োজন হবে। তবে তিনি নিশ্চিত করেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে কমিশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

পাশাপাশি, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতীকের লড়াইয়ে একটি বড় বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে তিনি জানান, জাতীয় ফুল ‘শাপলা’ কোনো দলকেই প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হবে না।

দায়িত্ব গ্রহণের পর নিজের ও কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে ওঠা প্রশ্নের জবাবে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘আমি এই চেয়ারকে বিচারকের আসন মনে করি। সবার জন্য সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে চাই।’

জীবনের শেষভাগে এসে এই দায়িত্বকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, দেশের এই ক্রান্তিকালে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়ে তিনি হাসিমুখে বিদায় নিতে চান এবং এর জন্য দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।