জরুরি অবস্থা ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ: সংবিধান সংশোধনে একমত ৩০ দল

ভবিষ্যতে আর ঢালাওভাবে ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগের’ অজুহাতে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা যাবে না। কেবল প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাতেও নয়, জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রয়োজন হবে মন্ত্রিসভার অনুমোদন, যেখানে বিরোধী দলীয় নেতাকেও রাখতে হবে। একইসঙ্গে, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রেও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের সুযোগ আর থাকছে না।

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে সংবিধানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ সংশোধনের বিষয়ে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই যুগান্তকারী ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত এক সংলাপে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল এই সংস্কার প্রস্তাবগুলোতে সম্মতি জানিয়েছে।

জরুরি অবস্থার নতুন রূপরেখা

রোববার (১৩ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংলাপ শেষে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, সংবিধানের ১৪১(ক) অনুচ্ছেদে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। নতুন প্রস্তাবে ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগ’ শব্দগুচ্ছের পরিবর্তে ‘রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতার প্রতি হুমকি, মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ’—শুধুমাত্র এমন সুনির্দিষ্ট কারণেই জরুরি অবস্থা জারি করা যাবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জরুরি অবস্থা চলাকালেও কোনো নাগরিকের ‘জীবনের অধিকার’ এবং সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিচার ও দণ্ড সংক্রান্ত মৌলিক অধিকার খর্ব করা যাবে না, যা মানবাধিকারের সুরক্ষায় একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রধান বিচারপতি নিয়োগে স্বচ্ছতা

আলোচনায় সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনার বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকেই প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেবেন।

তবে, কোনো দল চাইলে নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়ে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে জ্যেষ্ঠতম দুজন বিচারপতির মধ্য থেকে একজনকে নিয়োগের বিধান করতে পারবে। তবে শর্ত হলো, অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের অভিযোগে অভিযুক্ত কোনো বিচারপতি এই পদে নিয়োগের জন্য বিবেচিত হবেন না।

জুলাই সনদের পথে যাত্রা

অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে এটি ছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের দ্বাদশ দিনের সংলাপ। কমিশনের লক্ষ্য, আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে এই ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন করা। এ লক্ষ্যে সোমবারও (১৪ জুলাই) দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে কমিশন।

সংলাপে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ মোট ৩০টি দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।