সাংবিধানিক বর্ম পাচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, পরিবর্তনে লাগবে গণভোট

সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করার পর এটিকে পরিবর্তন করার পথ কঠিন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই ব্যবস্থায় কোনো ধরনের রদবদল আনতে হলে সংসদের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা যথেষ্ট হবে না, আয়োজন করতে হবে গণভোটের। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ বিষয়ে প্রায় পূর্ণাঙ্গ ঐকমত্য থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে টানা আলোচনার পর কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে দলগুলোর মধ্যে কোনো মতভিন্নতা নেই।

শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকারই নয়, সংবিধানের আরও কয়েকটি মৌলিক অনুচ্ছেদকে গণভোটের আওতায় আনা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে সংবিধানের প্রস্তাবনা, রাষ্ট্রের মূলনীতি এবং অনুচ্ছেদ ৪৮, ৫৬ ও ১৪২। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ক নতুন যুক্ত হতে যাওয়া ৫৮(খ), ৫৮(গ), ৫৮(ঘ) এবং ৫৮(ঙ) অনুচ্ছেদগুলোও এই সুরক্ষা পাবে। তবে, এসব অনুচ্ছেদ ছাড়া সংবিধানের অন্য যেকোনো সংশোধনী উচ্চকক্ষ গঠন হওয়ার আগ পর্যন্ত সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতেই করা যাবে।

আলোচনায় দেশের শাসনব্যবস্থায় দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে প্রায় সব দলই একমত হয়েছে। তবে জট বেঁধেছে উচ্চকক্ষের গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে। কিছু দল প্রাপ্ত ভোটের হারের অনুপাতে এবং অন্য কিছু দল প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের সদস্য নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছে।

একাধিক বৈঠকেও সমাধান না আসায় রাজনৈতিক দলগুলো এখন বিষয়টি চূড়ান্ত করার ভার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ওপরই অর্পণ করেছে। অধ্যাপক আলী রীয়াজ আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘কমিশন দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা চালিয়ে যাবে এবং আগামী সপ্তাহের মধ্যেই দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়োগের বিষয়ে একটি চূড়ান্ত সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে।’

এদিনের বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ মোট ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

কমিশনের পক্ষে আলোচনায় আরও অংশ নেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।