নিয়োগ ও পদোন্নতিতে রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই বাতিল হচ্ছে

সরকারি চাকরিতে নিয়োগ ও পদোন্নতির দীর্ঘদিনের বিতর্কিত অধ্যায়ের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। এখন থেকে কোনো প্রার্থীর যোগ্যতা বিচারের ক্ষেত্রে তার বা তার পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাওয়া হবে না। জনপ্রশাসনে রাজনীতিকরণ বন্ধ করতে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে এই ধরনের যাচাই-বাছাইয়ের প্রথা বাতিলের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে। কমিশনের মতে, সরকারি চাকরিতে রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাওয়ার প্রক্রিয়াটিই জনপ্রশাসনে রাজনীতিকরণের প্রথম ধাপ। এর ফলে অতীতে ‘বিরূপ মন্তব্যের’ কারণে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেকে নিয়োগ ও পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

সোমবার (১৪ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এখন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা ও সুরক্ষা সেবা বিভাগ সম্মিলিতভাবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে। এটি ছিল জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত দ্বিতীয় সভা।

এই সিদ্ধান্তের ফলে এখন থেকে বিসিএসসহ অন্যান্য সরকারি চাকরিতে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর পুলিশ ভেরিফিকেশনে শুধু প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা আছে কি না, তা যাচাই করা হবে। প্রয়োজনে দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছেও তথ্য চাইতে পারবে মন্ত্রণালয়।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে গঠিত ১১টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের কাজ চলছে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর এসব কমিশন গঠন করা হয়েছিল।

অন্যান্য সংস্কার প্রস্তাবের বর্তমান অবস্থা কী?

তবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বেশ কিছু জটিল ও সংবেদনশীল বিষয়ে আরও পর্যালোচনার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেমন:

ইউএনও-র ক্ষমতা: উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে তাদের উপজেলা পরিষদের অধীন না রেখে কেবল আইনশৃঙ্খলা ও ভূমি ব্যবস্থাপনার মতো সংরক্ষিত দায়িত্ব দেওয়ার সুপারিশটি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ: ‘সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিসের’ বাইরে ৫ শতাংশ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সুপারিশটিও একটি বিশেষ কমিটি খতিয়ে দেখবে।

স্থায়ী কমিশন: জনপ্রশাসন সংস্কার কার্যক্রমকে চলমান রাখতে একটি স্বাধীন ও স্থায়ী কমিশন গঠনের প্রস্তাবও পর্যালোচনার জন্য কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।

অন্যদিকে, ভূমি রেজিস্ট্রেশন দপ্তরকে আইন মন্ত্রণালয়ের বদলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনার প্রস্তাবটি এখনই বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া, পদোন্নতির সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছানো কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধা বা নতুন বেতন স্কেল দেওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য অর্থ বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়েছে।

এর পাশাপাশি, সরকার আরও কিছু সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে। এর মধ্যে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি সংক্রান্ত নীতিমালা জারি এবং ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে সরকারি দপ্তরে গণশুনানি বিষয়ক সংশোধিত পরিপত্র জারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।