১১ মাস পর আদালতে মুখ খুললেন দীপু মনি

১১ মাস কারাভোগের পর এই প্রথমবার আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নিজের কথা বললেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। বুধবার (১৬ জুলাই) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে অর্থ পাচার মামলায় শুনানির সময় বিচারকের অনুমতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘সুনাম অর্জন করতে সারা জীবন চলে যায়, আর নষ্ট করতে সময় লাগে মাত্র দুই মিনিট। আমি আমার মামলা লড়তে চাই। এ জন্য দরকার তথ্য-উপাত্ত। তথ্যই আমার শক্তি।’

দীর্ঘদিন পর আদালতে কথা বলার সুযোগ পেয়ে দীপু মনি নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে অন্ধকারে থাকার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমি একজন নাগরিক। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ জানবার অধিকার আমার রয়েছে। আমাকে অন্ধকারে রেখে দুদক আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।’

অভিযোগ ও আত্মপক্ষ সমর্থন

এদিন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দীপু মনির বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে। দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম আদালতকে জানান, তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

এর জবাবে দীপু মনি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘পত্রিকায় দেখেছিলাম, আমার নাকি ২৮টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে এবং তাতে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এটা একেবারেই অসম্ভব ও বাস্তবতার সঙ্গে এর কোনো মিল নেই।’

তিনি আরও দাবি করেন, তার নিজের নামে মাত্র ছয়টি ব্যাংক হিসাব আছে, যার মধ্যে দুটি লেনদেন হয় না। একজন নিয়মিত করদাতা হিসেবে গত ১৫ বছরে তার সব সম্পদের তথ্য আয়কর বিবরণীতে দেওয়া আছে বলেও তিনি আদালতকে জানান।

আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাতে বাধা

দীপু মনি আদালতে তার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরে বলেন, তিনি তার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ৭০টি মামলা। অথচ এই ১১ মাসে আমি মাত্র দুবার আমার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি।’

তিনি অভিযোগ করেন, গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কারাগারে সাক্ষাতের অনুমতি পাওয়া অত্যন্ত কঠিন, যদিও একই চত্বরের অন্যান্য কারাগারে বন্দীরা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান।

তার এই বক্তব্যের পর বিচারক মন্তব্য করেন, ‘এমন তো হওয়ার কথা নয়।’ তিনি বলেন, আসামি হিসেবে দীপু মনি সব ধরনের আইনি সুবিধা পাবেন এবং আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে না পারলে তিনি অনিরাপদ বোধ করতে পারেন। দীপু মনির আইনজীবী মোরশেদ হোসেনও আদালতের এই কথার সঙ্গে একমত হয়ে বলেন, ‘বাস্তবতা অনেক কঠিন। অনুমতি পেলেও অনেক সময় সাক্ষাতের সুযোগ পাওয়া যায় না।’

দুদক ও কারা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

দীপু মনির বক্তব্যের বিরোধিতা করে দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, ‘মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে মামলার সব কাগজপত্রের অনুলিপি পাবেন। দুদক নথিপত্রের ভিত্তিতেই মামলা করে এবং তদন্তে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।’

অন্যদিকে, আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোছা. কাওয়ালিন নাহার। তিনি বলেন, ‘উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে যেকোনো বন্দী তার আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে পারেন। দীপু মনির ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হওয়ার সুযোগ নেই।’

প্রায় ৪৫ মিনিট শুনানি শেষে আদালত দীপু মনিকে অর্থ পাচার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। দুপুর আড়াইটার দিকে প্রিজন ভ্যানে করে তাকে আবার কাশিমপুর কারাগারের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় প্রিজন ভ্যানের একটি বেঞ্চে বিমর্ষ মুখে মাথা নিচু করে বসে ছিলেন সাবেক এই মন্ত্রী।