সুইচ বন্ধ করে দিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন, এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য

গত মাসে ২৬১ আরোহী নিয়ে বিধ্বস্ত হওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের ক্যাপ্টেন উড্ডয়নের পরপরই উড়োজাহাজটির জ্বালানি সুইচ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া ব্ল্যাক বক্সের রেকর্ডিং থেকে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানটি চালাচ্ছিলেন ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্ডার। তিনি অভিজ্ঞ ক্যাপ্টেন সুমিত সাবারওয়ালকে প্রশ্ন করেন, কেন তিনি উড্ডয়নের পর সুইচগুলো ‘কাটঅফ’ অবস্থানে নিয়ে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের প্রাথমিক মূল্যায়নের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই মুহূর্তে ফার্স্ট অফিসার বিস্ময় ও আতঙ্ক প্রকাশ করলেও ক্যাপ্টেন শান্ত ছিলেন।

গত ১২ জুন ভারতের গুজরাট রাজ্য থেকে উড্ডয়নের পরপরই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এতে বিমানের ২৪২ আরোহীর মধ্যে একজন ছাড়া বাকি সবাই নিহত হন। নিহত যাত্রীদের মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ এবং একজন কানাডীয় নাগরিক ছিলেন। এ ছাড়া, ভূমিতে থাকা আরও ১৯ জন এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। আমেদাবাদ বিমানবন্দরের কাছেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জ্বালানি সুইচ দুটি এক সেকেন্ডের ব্যবধানে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এবং প্রায় দশ সেকেন্ড পর আবার চালু করা হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের পাইলটরা বলেছেন, যেহেতু ফার্স্ট অফিসার কুন্ডার বিমানটি চালাচ্ছিলেন, তাই তিনি সম্ভবত নিয়ন্ত্রণকাজে ব্যস্ত ছিলেন। অন্যদিকে ক্যাপ্টেন সাবারওয়ালের হাতে সুইচগুলো নাড়াচাড়া করার সুযোগ ছিল।

তবে ভারতের এয়ারক্র্যাফট অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি) বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ‘বাছাই করা ও যাচাইবিহীন প্রতিবেদনের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে’ না পৌঁছানোর জন্য সবাইকে আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, ‘আমরা জনসাধারণ ও গণমাধ্যম উভয়কেই তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে এমন অপরিপক্ব বয়ান ছড়ানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি।’ এএআইবি আরও জানায়, তদন্ত এখনো চলছে এবং ‘চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে মূল কারণ এবং সুপারিশগুলো উঠে আসবে’।

এদিকে, কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ঘটনাটি নিছক নিরাপত্তা ত্রুটি না হয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে, তা ফৌজদারি তদন্তের আওতায় আনা উচিত।

এয়ার ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহী ক্যাম্পবেল উইলসন চলতি সপ্তাহে সংস্থার কর্মীদের দুর্ঘটনার বিষয়ে আগাম ধারণা না করার পরামর্শ দিয়েছেন এবং তদন্ত চলমান থাকার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। পাইলটদের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতেও তিনি রাজি হননি।

এয়ার ইন্ডিয়ার একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাদের প্রতিষ্ঠান তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘জ্বালানির মানে কোনো সমস্যা ছিল না এবং উড্ডয়নের সময়ও কোনো অস্বাভাবিকতা ছিল না।’

প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই এয়ারলাইন পাইলটস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া বলেছে, প্রতিবেদনের সুর ‘পাইলটের ভুলের দিকে পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে মনে হচ্ছে। এই ‘অনুমান’ প্রত্যাখ্যান করে সংস্থাটি একটি ‘নিরপেক্ষ ও তথ্যভিত্তিক তদন্তের’ দাবি জানিয়েছে।