গ্রামীণফোনের মুনাফা ৩১% কমলেও লভ্যাংশ ঘোষণা ১১০%

দেশের শীর্ষ টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১ শতাংশ কমে ১,৫১৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। মূলত অর্থনীতির ধীরগতির কারণে এই মুনাফা কমেছে বলে বুধবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

তবে মুনাফা কমলেও শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১১০ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে গ্রামীণফোনের পরিচালনা পর্ষদ। শেয়ারপ্রতি এই লভ্যাংশের পরিমাণ ১১ টাকা, যা প্রথমার্ধের মোট মুনাফার ৯৮ শতাংশ। এই লভ্যাংশ পাওয়ার জন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ আগস্ট।

লভ্যাংশ ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম ১.১৫ শতাংশ বেড়ে প্রতিটি শেয়ার ৩০০.২০ টাকায় লেনদেন শেষ করেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারি-জুন সময়ে গ্রামীণফোনের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ১১.২১ টাকা। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির মোট রাজস্ব আগের বছরের তুলনায় ৩ শতাংশ কমে ৭,৯৩৮ কোটি টাকা হয়েছে।

গ্রামীণফোন তাদের বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ঈদের সময়ে গ্রাহকদের বাড়তি সক্রিয়তার কারণে সার্বিক প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল ছিল। শুধু এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটি মুনাফায় ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এবং এই প্রান্তিকে মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৭৯ কোটি টাকা।

গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান বলেন, ‘গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে আমরা একটি কঠিন অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, যা টেলিযোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই কঠিন সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিবেশ সত্ত্বেও আমাদের কৌশলগত পদক্ষেপগুলো ফল দিতে শুরু করেছে। এই প্রান্তিকে বলিষ্ঠ ব্যয় ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি রাজস্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছরের তুলনায় নিট মুনাফা ২ শতাংশ বেড়েছে। শেয়ারহোল্ডারদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী মূল্য তৈরিতে আমাদের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে আমরা লভ্যাংশ প্রদান অব্যাহত রাখব, যাতে আপনারা ধারাবাহিক ও নির্ভরযোগ্য প্রতিদান পান। আমরা ২০২৫ সালের প্রথমার্ধের জন্য শেয়ারপ্রতি ১১ টাকা অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ ঘোষণা করছি।’

গ্রামীণফোনের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) অটো ম্যাগনে রিসবাক বলেন, ‘অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে, মুদ্রাস্ফীতি কমতে শুরু করেছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে। অন্যদিকে, বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনা একটি অনিশ্চয়তা তৈরি করছে, কারণ বাংলাদেশের শক্তিশালী বস্ত্র খাতের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি যোগ করেন, ‘এই সামষ্টিক প্রেক্ষাপটে আমরা মুনাফা ধরে রাখার জন্য ব্যয় ও পুঁজি ব্যবস্থাপনার ওপর মনোযোগ দিয়েছি এবং একইসঙ্গে বাজারে আমাদের শীর্ষস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করছি। আমাদের ব্যয় গত বছরের তুলনায় প্রায় ২ শতাংশ কমেছে। গত বছরের তুলনায় আমাদের মোট রাজস্ব ২.৮ শতাংশ কমলেও, প্রান্তিক হিসাবে ৭ শতাংশ বেড়েছে, যা মূলত ডেটার বর্ধিত ব্যবহার এবং ঈদকে কেন্দ্র করে গ্রাহকদের বাড়তি সক্রিয়তার কারণে সম্ভব হয়েছে।’

সিএফও আরও বলেন, ‘বর্তমান সামষ্টিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে আমি আশাবাদী যে ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে আমরা গত বছরের তুলনায় ভালো প্রবৃদ্ধি দেখতে পাব।’