সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের প্রথম জাতীয় সমাবেশ আজ

সাংগঠনিক শক্তি ও কর্মী-সমর্থকদের ভিত্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি সাত দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আজ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের প্রথম জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে। তাদের অন্যতম প্রধান দাবি হলো, আগামী সাধারণ নির্বাচন সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির অধীনে আয়োজন করা।

সমাবেশ সফল করতে সারাদেশ থেকে বাস, ট্রেন ও লঞ্চের ব্যবস্থা করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। অনেকে নির্ধারিত সময়ের আগেই ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন।

শুক্রবার বিকেলে সমাবেশস্থল পরিদর্শনে গিয়ে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) রাত থেকেই স্থল, নৌ, সড়ক ও রেলপথে মানুষ ঢাকায় প্রবেশ শুরু করবে। আমরা আশা করি, কেউ হয়রানির শিকার হবেন না এবং জাতীয় সমাবেশটি একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে।’

সরেজমিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, শুক্রবার দুপুর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে জড়ো হতে শুরু করেছেন। তারা ছবি তুলছেন এবং উৎফুল্লভাবে একে অপরের সঙ্গে গল্প করছেন। একই সঙ্গে সমাবেশের মঞ্চ, অস্থায়ী ওজুখানা, শৌচাগার এবং বিশ্রামের স্থান তৈরির কাজ চলছিল।

নড়াইল সদরের শাহাবাদ ইউনিয়ন থেকে আসা জামায়াত কর্মী মো. রোকনুদ্দিন বলেন, ‘সমাবেশের দিন মঞ্চের কাছাকাছি থাকা কঠিন হবে বলে আমি একদিন আগেই চলে এসেছি। ১৫ বছরের নিপীড়ন ও নির্যাতনের পর আমরা এমন একটি সমাবেশ করতে পারব, তা কখনো কল্পনাও করিনি। এটি আমার রাজনৈতিক জীবনের একটি অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত।’ তিনি আরও জানান, শুধু নড়াইল জেলা থেকেই জামায়াতের নেতা-কর্মীদের নিয়ে ২১০টি বাস আসবে।

সমাবেশকে সামনে রেখে ঢাকা ও এর বাইরে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছে দলটি। তারা ব্যানার ও ফেস্টুন টাঙিয়েছে, নিয়মিত মিছিল ও শোভাযাত্রা করেছে, প্রচারপত্র বিলি করেছে এবং সজ্জিত যানবাহনে মাইকের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছে। রাজধানীর শাহবাগ, মিরপুর, বাড্ডা, মহাখালী, সদরঘাট ও বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় এমন কার্যক্রম চোখে পড়েছে।

গোলাম পরওয়ার আশা প্রকাশ করেন, শুক্রবার রাতের মধ্যেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। তিনি জানান, সমাবেশস্থলের বিভিন্ন স্থানে শত শত লাউডস্পিকার ও ৩৩টি এলইডি পর্দা স্থাপন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘শনিবার সমাবেশের জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা কিছু সাময়িক অসুবিধার কারণ হতে পারে। তবে, দলটি এই বিঘ্ন যতটা সম্ভব কমানোর জন্য ব্যবস্থা নিয়েছে।’

সমাবেশস্থলে শান্তি, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অংশগ্রহণকারীদের সহায়তার জন্য প্রায় ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ১৫টি চিকিৎসা কেন্দ্র ও বিভিন্ন জেলা থেকে আসা যানবাহনের জন্য ১৫টি নির্ধারিত পার্কিং এলাকা থাকবে।

দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, শনিবার সকাল ১০টায় কোরআন তেলাওয়াত ও ইসলামি সংগীতের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হবে। মূল কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা দুপুর ২টায়।

দলটির সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে: অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করা; জুলাই মাসের গণহত্যার শিকার সকলের জন্য ন্যায়বিচার; প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার; জুলাই সনদ ও ইশতেহার বাস্তবায়ন; জুলাই অভ্যুত্থানের সময় শহীদ বা আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন; সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান; এবং এক কোটিরও বেশি প্রবাসীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ প্রদান।