মসজিদ কমিটির সভাপতি নিয়ে বিতর্ক, ব্যাখ্যা দিলেন ধর্ম উপদেষ্টা 

অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ‘এখন থেকে মসজিদ কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।’ শুক্রবার খুলনায় এক অনুষ্ঠানে তার এই বক্তব্যে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে পরে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর ব্যাখ্যা দেন। তিনি জানান, তার বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে এবং এই নিয়ম শুধু সরকারি মডেল মসজিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।

শুক্রবার দুপুরে খুলনার বয়রা এলাকায় নির্মিত মেট্রোপলিটন মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন থেকে দেশের প্রতিটি মসজিদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।’ তিনি আরও স্পষ্ট করেন, ইমাম নিয়োগ ও বরখাস্তের ক্ষেত্রেও সরকার নির্ধারিত নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।

এ বিষয়ে শিগগিরই মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে জানিয়ে ড. খালিদ হোসেন বলেন, ‘মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের সহজে চাকরি হারানোর ভয় থাকবে না। এছাড়া তারা নির্দিষ্ট হারে মাসিক বেতন পাবেন।’ তিনি জানান, গত বছর সরকার ইমাম-মুয়াজ্জিনদের আর্থিক সহায়তার জন্য প্রায় চার কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে।

বক্তব্যে ইমামদের আরও জনবান্ধব হওয়ার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘বাস্তবতানির্ভর ওয়াজ ও নসিহতের মাধ্যমে সমাজকে সচেতন করে তুলতে হবে। সমাজে ‘মব কালচার’ তৈরির ভয়াবহতা মসজিদে আলোচনার মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মসজিদভিত্তিক শিক্ষাকেন্দ্রগুলোকেও পূর্ণ দায়িত্ববোধের সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে। যেখানে প্রকৃত পাঠদান হচ্ছে না, অথবা একই ব্যক্তি মসজিদ ও স্কুলে একসঙ্গে শিক্ষকতা করছেন—এমন অনিয়মের প্রমাণ মিললে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ দেশের সব ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ইতোমধ্যেই শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে বলেও তিনি দাবি করেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. সালাম খান, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার, রেঞ্জ ডিআইজি মো. রেজাউল হক এবং খুলনার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।

ধর্ম উপদেষ্টার ব্যাখ্যা

এদিকে, ‘মসজিদের সভাপতি হবেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা’—ধর্ম উপদেষ্টার এমন বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন তিনি।

পোস্টে ড. খালিদ হোসেন বলেন, ‘আমার বক্তব্যটি ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। খুলনায় ইমামদের সমাবেশে বক্তব্যে যেসব কথা বলা হয়েছিল, মিডিয়ায় সেটি যথাযথভাবে উপস্থাপিত হয়নি।’

তিনি যোগ করেন, ‘সারাদেশে মডেল মসজিদগুলো নির্মাণ ও পরিচালনা করা হয় সম্পূর্ণ সরকারের অর্থায়নে। তাই এর নিয়ন্ত্রণভার থাকবে সরকারের হাতে। এসব মসজিদের সভাপতি হবেন জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তবে তারা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হলে মুসলিম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) বা মুসলিম সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ড দায়িত্ব পালন করবেন। কর্মকর্তা নারী হলেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এর বিপরীতে সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা তিন লাখ বেসরকারি মসজিদের কমিটি, সভাপতি, সেক্রেটারি কে হবেন তা নির্ধারণ করবেন সংশ্লিষ্ট মসজিদের মুসল্লি, মোতাওয়াল্লী ও স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা। সেসব মসজিদে ডিসি অথবা ইউএনওর সভাপতি হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’

তবে বেসরকারি মসজিদের কমিটির সঙ্গে ইমাম, খতিব বা মুয়াজ্জিনের কোনো বিরোধ তৈরি হলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা চাইতে পারবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।