সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের প্রথম জাতীয় সমাবেশ, বিপুল জনসমাগম

আজ ১৯ জুলাই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ডাকা জাতীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুপুরের মধ্যেই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার নেতা, কর্মী ও সমর্থকের অংশগ্রহণে এটি দলটির প্রথম একক জাতীয় সমাবেশ।

সমাবেশে যোগ দিতে শুক্রবার রাত থেকেই বাস, ট্রেন ও লঞ্চযোগে নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেন। মঞ্চের কাছাকাছি স্থান নিশ্চিত করতে অনেকে রাতেই উদ্যান এলাকায় অবস্থান নেন। জামায়াতের নেতারা জানিয়েছেন, শুধু নড়াইল জেলা থেকেই প্রায় ২১০টি বাস রাজধানীর উদ্দেশে রওনা হয়েছে।

নড়াইল থেকে আসা জামায়াতের একজন কর্মী বলেন, ‘আমি একদিন আগেই চলে এসেছি, কারণ সমাবেশের দিন মঞ্চের কাছে থাকা কঠিন হবে। ১৫ বছরের নিপীড়ন-নির্যাতনের পর আমরা যে এমন একটি সমাবেশ করতে পারব, তা কখনো কল্পনাও করিনি। এটি আমার রাজনৈতিক জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।’

প্রায় এক মাসের প্রস্তুতি শেষে আয়োজিত এই সমাবেশকে দলটি তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একক রাজনৈতিক জমায়েত বলে দাবি করছে। তাদের ধারণা, সমাবেশে দশ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছে।

এর আগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সঙ্গে যৌথভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে অংশ নিলেও, এই ঐতিহাসিক স্থানে এটিই জামায়াতের প্রথম বড় ধরনের একক রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শন।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াত এই সমাবেশকে ‘জাতীয় ঐক্য’ প্রতিষ্ঠা এবং একটি ‘কল্যাণরাষ্ট্র’ গঠনের পূর্ব-প্রস্তুতি হিসেবে দেখছে।

সমাবেশে দলটির আমীর ডা. শফিকুর রহমান ভাষণ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং গত বছরের গণহত্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচারসহ জামায়াতের সাত দফা দাবির ভিত্তিতে ঐক্যের ডাক দেবেন।

বিশাল জনসমাগম সামাল দিতে এবং প্রয়োজনীয় পরিষেবা নিশ্চিত করতে আয়োজকরা ৬,০০০ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করেছে। এছাড়া, ৫০০টির বেশি অস্থায়ী শৌচাগার, ১,০০০ পানির কল, ১৫টি চিকিৎসা কেন্দ্র, ওজুর স্থান, নির্ধারিত গাড়ি রাখার জায়গা এবং হাজার হাজার চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরো উদ্যানজুড়ে শত শত লাউডস্পিকার এবং ৩৩টি এলইডি পর্দাও স্থাপন করা হয়েছে।

দলটির ব্যাপক প্রস্তুতি সত্ত্বেও, প্রচণ্ড গরমে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অস্বস্তির চিত্র দেখা গেছে বলে ঘটনাস্থলে থাকা সংবাদকর্মীরা জানিয়েছেন। বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং অনেককে রমনা পার্কের গাছের নিচে বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে।

এদিকে, সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকায় আসার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় দলটির দুজন নেতা নিহত হয়েছেন।

সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথ দিয়ে জামায়াতের কর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। এর ফলে শাহবাগ, মৎস্য ভবন মোড়, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার এবং আশপাশের সড়কগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে বেশিরভাগ স্থানেই কর্মীদের মিছিলের জন্য এক লেন ছেড়ে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে দেখা গেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার রফিকুল ইসলাম ‘দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’কে বলেন, ‘অন্যান্য ছুটির দিনের তুলনায় আজ উড়ালসড়কে যানবাহনের চাপ বেশি। এছাড়া মগবাজার থেকে মহাখালী সড়কেও কিছুটা যানজট রয়েছে।’

সমর্থকদের বহনকারী বাসগুলো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার ও ইস্কাটনসহ বিভিন্ন প্রধান সড়কে পার্ক করে রাখায় যানজট পরিস্থিতি আরও তীব্র হয়েছে।

সকাল ১০টা নাগাদ কোরআন তেলাওয়াত ও ইসলামি সংগীতের মাধ্যমে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। এদিকে, এই সমাবেশের কারণে সৃষ্ট যানজট ও জনসাধারণের অসুবিধার জন্য দলটি প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করেছে।