কঠোর হচ্ছে তথ্য গোপনের শাস্তি, বাড়ছে পাঁচ গুণ

নাগরিকদের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করতে ‘তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯’ সংশোধনের যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুযায়ী, কোনো কর্মকর্তা তথ্য প্রদানে বাধা দিলে বা তথ্য গোপন করলে জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে পাঁচ গুণ। আগে যেখানে দৈনিক ৫০ টাকা হারে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল, সংশোধিত আইনে তা দৈনিক ২৫০ টাকা হারে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে।

শুধু জরিমানার পরিমাণ বৃদ্ধিই নয়, দুর্নীতির মতো গুরুতর অপরাধ আড়াল করার উদ্দেশ্যে কেউ তথ্য গোপন করলে জরিমানা আরোপ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার আইনটির চারটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা (৫, ৬, ৭ ও ২৭) সংশোধন করে তথ্যপ্রবাহ অবাধ ও স্বচ্ছ করার এই উদ্যোগ নিয়েছে। চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়, যার ভিত্তিতে এই সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়।

বদলে যাচ্ছে সরকারি তথ্য ব্যবস্থাপনার চিত্র

নতুন নিয়মে সরকারি দপ্তরগুলোকে আর তথ্যের জন্য আবেদনের অপেক্ষায় থাকতে হবে না। সংশোধিত ৫ ও ৬ ধারা অনুযায়ী, প্রতিটি সংস্থাকে তাদের সব তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে হবে এবং একটি জাতীয় ই-নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। এর মধ্যে থাকবে বাজেট, প্রকল্পের ব্যয়, সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এবং নিরীক্ষা (অডিট) রিপোর্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো, যা কর্তৃপক্ষকে নিজ উদ্যোগেই প্রকাশ করতে হবে। ‘রেকর্ড’ বলতে ফাইল, পাণ্ডুলিপি থেকে শুরু করে অডিও বা যেকোনো ডিজিটাল তথ্যকে বোঝানো হবে।

তথ্য গোপনের সুযোগ সীমিত হচ্ছে

তবে কোন তথ্য প্রকাশ করা হবে না, সেই বিধানও আরও কঠোর করা হচ্ছে। আইনের ৭ নম্বর ধারায় দুটি নতুন উপধারা যোগ করে জনস্বার্থের বিবেচনায় তথ্য গোপনের সুযোগকে সীমিত করা হয়েছে। এখন থেকে কোন পরিস্থিতিতে এবং কী কারণে তথ্য গোপন রাখা যাবে, তার জন্য স্বচ্ছ ও সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড অনুসরণ করতে হবে।

সংস্কার প্রক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

এই সংস্কার প্রক্রিয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খাদিজা তাহেরা ববি। তিনি জানিয়েছেন, ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আইনটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে।’

প্রস্তাবিত খসড়াটির ওপর জনসাধারণের মতামত গ্রহণের জন্য ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সংশোধিত আইনটি দ্রুত জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে বলে তিনি জানান।